ফরিদ সুমন।
লেখাপড়ায় খুব একটা খারাপ ছিলেন না তবে রাজনীতির কারনে মনোযোগী ছিলেননা স্কুলের ক্লাসে। তার মনোযোগ ছিলো রাজনীতি, খেলাধুলা, অসহায় সহায় হওয়া ও নানা ধরনের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের প্রতি। তিনি যখন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্র তখন থেকেই তার নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক যোগ্যতা প্রকাশ পেতে থাকে। তখন থেকেই তিনি রাজনীতির অলিগলি পেড়িয়ে মহাসড়কের খোজে উত্তল হয়ে ওঠেন। এইভাবেই তিনি একদিন মহাসড়ক হয়ে বাধার পাহাড় পেড়িয়ে রাজনীতিকে মহাসাগরের তীরে নিয়ে স্বাধীনতার মুক্তা তুলে এনে দেশের অলিগলি ঢেকে দিলেন সেই মুক্তার দানায়।
শেখ মুজিব যখন মাত্র রাজনীতির মেঠোপথ পেড়িয়ে মহাসড়কে পা ফেলে হাটা শুরু করেছেন তখনই পাকিস্তান সরকার বাঙলার কৃষিশ্রমিকদের উপড় ঝাপিয়ে পড়ে। কৃষিশ্রমিকদের এক জেলা থেকে আর এক জেলায় গিয়ে কাজ করার উপড় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে তারা বেকার হয়ে যায় আবার অন্যদিকে জমির মালিকরা কৃষিশ্রমিকের অভাবে জমি চাষ করাতে পারেনা হাজার হাজার হেক্টর খেত পড়ে থাকে দূর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছিল দেশ। তখনকার বড় মাপের কোন রাজনৈতিক নেতা সে পরিস্থিতি আচ করতে পারেনি কারণ সেই মাপে দূরদর্শিতা তাদের ছিলোনা। তরুন শেখ মুজিব ছিলেন সেই মাত্রার দূরদর্শী নেতা যিনি তখন বুঝতে পেরেছিলেন কৃষকদের সাথে দেশও দূরদশার কবলে পড়বে। একাই কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে সে সমস্যার সমাধান করলেন, হয়ে গেলেন কৃষকের নেতা। দেশের কান্ডারি হওয়ার পথে এগিয়ে গেলেন আর এক ধাপ।
এর মধ্যে শুরু হলো আর এক অত্যাচার, জিন্না মারা যাওয়ায় খাজা নাজিমুদ্দিন বড়লাট হয়ে জিন্নার নামে এক ফান্ডের জন্ম দিলেন। যে যা পারে সে সেই পরিমান চাঁদা দিবে কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই এটা আর একটা অত্যাচার হয়ে উপস্থিত হলো, সবার থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা শুরু করেছে। সরকারের লোকরা মনে করতে লাগলো যে যত ফান্ডের টাকা আদায় করতে পারবে সে ততো তাড়াতাড়ি প্রমোশন পাবে। তাদের লোভে পিষ্ট হলো সাধারণ মানুষ, প্রতিবাদে ফেটে পরলেন সেই শেখ মুজিব। বন্ধ হয়ে গেল চাঁদা তোলা। ক্ষিপ্ত বলো স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে বড় লাট নাজিমুদ্দিন গোপালগঞ্জ সফরে আসবেন, প্রশাসনের সন্দেহ শেখ মুজিব এই সফরে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে সন্দেহে স্থানিয় প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিলো, তাতে বাধা দিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পূর্ব পরিচিত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে ডেকে নিয়ে তার থেকে নিশ্চয়তা চায় কোন রকম গোলযোগ করা হবেনা। তিনি ২টা শর্তে গোলযোগ না করার কথা দিল, একটা, নাজিমুদ্দিন ফান্ডের টাকা নিবেননা। টাকাটার একটা অংশ তিনি স্থানীয় মসজিদে দিবেন আর বাকি বড় অংশ দিয়ে গোপালগঞ্জে একটা কলেজ স্থাপন করতে হবে। যথাসময় বড় লাট এলেন এবং মুজিবকে ডেকে নিয়ে জানালেন তার দাবি তিনি গ্রহণ করেছেন। পরের দিন জনসভা হলো এবং একই সময় তিনি ঘোষণা দিলেন কিছু টাকা দিয়েছেন এবং বড় অংশ দিয়ে গোপালগঞ্জে একটি কলেজ করা হবে। সেই কথামতো কলেজ হয়েছে তার আর একটা স্বপ্ন সফল হলো আর শেখ সাহেব ইতিহাসের পথে প্রথম পা রাখলেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারিরা তাদের কিছু দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে কর্মবিরতিতে গেল, কিন্তু তাদের পক্ষ হয়ে কেউ যখন এগিয়ে এলোনা তখোনও কান্ডারি হয়ে এগিয়ে এলো সেই শেখ সাহেব। যদিও এতে শেখ সাহেবের সার্পোট ছিলোনা তবুও তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার করে সে দাবি মানতে তাদের রাজি করিয়েছিলেন। এবাবেই তিনি দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রের নেত্রীত্ব নিজের হাতে তুলে নিচ্ছিলেন। এভাবেই একজন সার্বজনিন নেতার জন্ম হচ্ছিল সবার চোখের সামনে অথচ সবার অলক্ষ্যে।
এইসব কর্মকান্ডের মধ্যেই তার সখ্যতা গড়ে ওঠে মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির সাথে। মুসলিম-লীগ ভেঙ্গে গেল জন্ম হলো আঞ্চলিক দল “আওয়ামী মুসলিম লীগ” এখানেও এক বড় ভ‚মিকা ছিলো শেখ সাহেবের। অনেক চেষ্টা করেও তারা যখন বড় কোন আন্দালন গড়ে তুলতে পাড়লো না তকনো এগিয়ে এলেন তিনি। সিনিয়রদের অনুরোধে চলে গেলেন পশ্চিম পাকিস্তান, আওয়ামী মুসলিম লীগকে জাতীয় দলে পরিনত করার অনুরোধ নিয়ে হাজির হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির আঙ্গিনায়। তাকে রাজি করিয়ে তার হাতে প্রথম সভাপতির দায়ীত্ব দিয়ে গঠণ করলেন আজকের শক্তিশালী দল আওয়ামী-লীগ। এর পরে দেশে ফিরে এসে দলকে সংগঠিত করলেন, লীগকে গনমানুষের দলে পরিনত করলেন। মানুষকে নিয়ে নির্বাচন করলেন, ক্ষমতার দরজায় গিয়ে দাড়ালেন কিন্তু দরজা আর খুলতে পারলেন না। ফলে আবার আন্দলোন, এবার মানুষ তার পিছনে হুমরি খেয়ে পড়লো। মুক্তির স্বপ্ন ডানা মিলতে শুরু করলো সারা দেশে।
এর মধ্যে এলো ৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্সের মাঠে রোপিত হলো স্বধীনতার বীজ, সেই বীজ থেকে ২৫ মার্চ মধ্য রাতে প্রথম মাথা তোলে স্বাধীনতার বৃক্ষ। সেই বৃক্ষ ৯মাস ধরে পরিচর্যা করলো প্রয় ৭কোটি মানুষ। সেই বৃক্ষটা আমরা দখল করলাম প্রায় বিধ্বস্ত অবস্থায়। আর সেই বৃক্ষটা আবার আর এক মধ্যরাতে কেটে দিল একদল কুলাঙ্গার, আমরা আবার হাড়ালাম স্বাধীনতার উচ্ছাস।
সেই থেকে আমরা কষ্টমাখা কণ্ঠে তুলি – যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরেনাই … আবার তলিয়ে গেলাম স্বপ্নের অতলে।