পৃথিবীতে কত আন্দোলন হয়! কিন্তু বইপড়ার কোনো আন্দোলন চোখে পড়ে না। আসলে, বইপড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছি আমরা! আমাদের সময় এখন আর বইয়ের পাতায় কাটে না। সময় কাটে স্মার্ট ফোন আর ল্যাপটপ ব্যবহার করে। যে চোখের দৃষ্টি ছিল বইয়ের পাতায়, আজ তা থাকে স্মার্ট ফোনের পর্দায়। অথচ আমরা জানি তা আমাদের চোখ আর মস্তিষ্ক উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তার পরও আমরা বই ফেলে এসব ডিভাইসে চোখ বুলিয়ে সময় পার করছি।
চারপাশে প্রতিদিন কতশত আন্দোলন হচ্ছে। কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন, কখনো অধিকার আদায়ের আন্দোলন, কখনো প্রতিবাদী আন্দোলন। কিন্তু ‘বইপড়া’ নিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। কিন্তু আমরা এ বিষয় নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করি না। বইপড়ার উপকারিতা নিয়ে কখনো ভাবি না। আমাদের ভাবনা, বইপড়ায় অনেক সময় ব্যয় হয়। ধৈর্য ধরে বইপড়া অনেক কষ্টের কাজ। এমনটা কেন হবে? করলা তিতা হলেও উপকারী—এই কথা যেমন সত্য, তেমনি বইপড়া ছাড়া ‘মুক্তির রাস্তা’ এক প্রকার বন্ধ—এই বাস্তব সত্যকেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এরকম গভীর চিন্তাভাবনা আমরা করি না বটে।
প্রতিনিয়ত দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এভাবে বেকারত্ব বাড়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ, বই না পড়ার অভ্যাস! এই কথার কারণ হলো, বইপড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়। কাজ করার মন -মানসিকতা তৈরি হয়। ধৈর্যশক্তি বাড়ে। ফলে নিজেকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে কাজের সন্ধানে বের হয়। অলস সময় কাটাতে মন চায় না।
আমরা যারা একটু -আধটু পড়াশোনা করি, তারা পাঠ্য বইয়ের বাইরে তেমন একটা বই পড়ি না এটা ঠিক নয়। একাডেমি -বহির্ভূত বইপড়ার কোনো বিকল্প নেই আজকের দিনে, এই কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। একাডেমিক পড়ায় জ্ঞানের পরিধি বাড়ে না ততটা। চিন্তাশক্তি তৈরি হয় না বরং চাপ আরো বাড়ে। সুতরাং, পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সব ধরনের বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অতি জরুরি। দেশে লাইব্রেরি আছে, কিন্তু পড়ুয়া নেই, কখন কীভাবে একটা বইয়ের একটি বাক্য জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে, তা নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না, বরং আমাদের যে সময়টা বইয়ে দেওয়া দরকার ছিল, তা এখন টিকটক, ফ্রি ফায়ার, ফেইস বুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে ব্যয় হচ্ছে। এভাবে নিজের মেধা নিজেরাই নষ্ট করছি আমরা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রবাদে আছে, ‘একটা ভালো বই ১০০টা বন্ধুর সমান। ১০০ জন বন্ধু যে পথ দেখাবে, একটা ভালো বই সে পথ দেখাতে পারে। বন্ধুরা যা পরামর্শ দেয়, যে শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়, ইত্যাদি একটা বই অনায়াসে দিতে পারে জীবনের পরিবর্ত, বইপড়ার বিকল্প নেই। শুধু পড়লেই হবে না। বইপড়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন, ব্যানার, পোস্টার, নেতৃত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে বইপড়ার বিষয়ে মানুষজনকে আহ্বান জানানো গেলে ফল পাওয়া যাবে হাতে হাতে। তখন মানুষের কল্পনা থাকবে সুদূরপ্রসারী। বিকল্প চিন্তাভাবনায় মানুষ তার জীবিকার সন্ধান করবে। এজন্য স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির উদ্যোগে বইপড়া বিষয়ে সভা আয়োজন করতে হবে। শিক্ষিত মহল এগিয়ে এলে বইপড়া আন্দোলন বেগবান ও সফল হতে পারে।