ঘরের মাঠে বাংলাদেশের দলের মূল আক্রমণ হলো-‘স্পিন অ্যাট্যাক’। এতে সাফল্যও আসে বেশ। তাই সময়ই যে কোনো সিরিজে টাইগাররা চেষ্টা করে দলে স্পিনারের সংখ্যা ভারী রাখতে। ব্যতিক্রম হয়নি আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজেও। তবে এবার সাকিব আল হাসান ছাড়াও দলের কাছে আরো দুইটি বা-হাতি স্পিনারের অপশন ছিল। তারা হলেন-তাইজুল এবং নাসুম। তাদের মধ্যে যে কোনো একজনকেই দলে নেওয়া যেত। বোর্ড বেছে নেয় তাইজুলকে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি যখন বিপিএল ফাইনাল চলছিল তখনই ইংল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণা করে বিসিবি। সেখানে তাইজুলের নাম দেখে অনেকে অবাকই হয় কারণ তাইজুল টাইগারদের টেস্ট ফরম্যাটের সেরা বোলারদের মধ্যে অন্যতম একজন।
দল ঘোষণা পর সেসময় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, নাসুম আহমেদের জায়গায় তাইজুল ইসলামকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে পরে এতে বিতর্ক সৃষ্টি করে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি জানান অধিনায়ক তামিমের চাওয়ায় নাসুমের জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছে তাইজুল ইসলামকে। তবে দল নির্বাচনের খবর চার দেওয়ালের বাইরে আসায় বিব্রত অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে কথা বলতে আসেন তামিম। যার শুরুর অর্ধেক সময়ই কেটে যায় সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে। তবে এরপরে এক প্রশ্নের উত্তরে তামিম ব্যাখ্যা দেন কেন নাসুমের পরিবর্তে দলে তাইজুলকে নেওয়ায় তিনি মতামত দিয়েছিলেন। বলেন, ‘সিলেকশন মিটিংয়ে আমি অনেক কিছুতে একমত পোষণ করি, অসম্মত হই। নির্বাচকদের ক্ষেত্রেও সেটা হয়। কিন্তু আমরা একটা দল-আমি, প্রধান কোচ, নির্বাচক, সবাই। আমরা যদি ব্যর্থ হই, সবাই মিলে ব্যর্থ হই। সফল হলে সবাই মিলে সফল। ওখান থেকে কিছু বের হয়ে আসা হতাশাজনক।’
এদিকে সবশেষ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে নাসুম ছিলেন বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনারের ভূমিকায়। তবে সেই সিরিজে তাইজুলের না থাকা অবাক করেছে তামিমকে, ‘এখানে যার কথা বলা হচ্ছে, আমি খুবই অবাক হয়েছি, সে ভারত সিরিজে না থাকায়। সে শেষ ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আমার ভাবনা একদম সহজ। আমি সব সময় পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেব। আমি এমন কাউকে নিচ্ছি না, যে পাঁচ ম্যাচ খেলে কোনো উইকেট পায়নি।’
কিন্তু তাইজুলকে দলে ভেড়াতে গিয়ে নাসুমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও যে কঠিন ছিল, সেটাও পরিষ্কার করেছেন অধিনায়ক। বলেন, ‘এটাও বলছি, ভারত সিরিজে নাসুমও খুবই ভালো করছে। এছাড়া সে যে অল্প সুযোগ পেয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটে, সেখানে সে খুবই ভালো করেছে। টি-টোয়েন্টিতে তো ভালো করছেই। সবারই একটা চিন্তাধারা থাকে যে কোনো ধরনের বোলিং আক্রমণ আপনি চান। আমরা ভেবেছি তাইজুল আরেকটু ভালো হবে।’
এ সময় দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, পারফরম্যান্সকেই মানদণ্ড হিসেবে দেখেন তামিম। বলেন, ‘আমি পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেব। আমি যদি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে পছন্দ না-ও করি, সে যদি পারফরম করে, তাহলে তাকেই সব সময় সমর্থন করব। এটাই আমার দায়িত্ব। আমি তামিম ইকবাল একাদশের অধিনায়ক হলে কাকে পছন্দ করি বা না করি, সেটা আলোচনায় আসত। কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। এখানে এসব (তামিমের পছন্দ) গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। যে পারফর্ম করবে, সেই দলে খেলবে।’
সবশেষ ব্যাট হাতে জাতীয় দলের হয়ে তামিমকে খেলতে দেখা গিয়েছে ২০২২ সালের আগস্টে, বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সফরে। এরপর তাকে আর মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়া গত ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু চোটের কারণে সেটি হয়নি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও তাই এ প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। প্রশ্ন করা হয়, ‘বড় ম্যাচ, বড় সিরিজ যখন আসে তখন তামিমের ইনজুরি হয়—এই বিষয়গুলো (যখন প্রশ্ন ওঠে), অধিনায়ক হিসেবে, অনেক দিন খেলছেন, কেমন লাগে?’
জবাবে অধিনায়ক বলেন, ‘১৫ হাজার রান করার পরও যদি এই কথা শুনতে হয়, তাহলে এটা দুঃখজনক, অপ্রত্যাশিত। আমি ১৭ বছর ধরে খেলছি, দেশের হয়ে ৯০ ভাগ ম্যাচ খেলেছি। হয়তো ১০ ভাগ ম্যাচ মিস করেছি চোটের কারণে। আমার গড় যদি ৯০ ভাগ হয়, তাহলে এটা খুবই ভালো। কোনো ক্রিকেটারই কোনো ম্যাচ মিস করতে চায় না। এর চেয়ে বেশি আমার আসলে কিছু বলার নেই।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজারের কাছাকাছি রান করার পর যদি এটা শুনতে হয়, বা যে কেউ এটা বলছে বা লিখছে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটাই বলতে পারি। কোনো ক্রিকেটারই কোনো ম্যাচ মিস করতে চায় না। আপনি যেটা বললেন, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এর চেয়ে বেশি আমার আসলে কিছু বলার নেই।’