সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল দরকার হয়। এগুলো সাধারণত শরীরের ভেতরে তৈরি হয় এবং আমরা প্রতিদিনের খাবার থেকে পাই। এসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ভিটামিন বি ১২। এই ভিটামিন আমাদের শরীরে তৈরি হয় না। খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। লাল রক্ত কোষ এবং ডিএনএ তৈরির জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর প্রয়োজনীয়তা
শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর অভাব হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে দুর্বলতা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা অন্যতম। এমনকী দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতাও। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে, সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যায় এবং বুক ধড়ফড় করার সমস্যা দেখা দেয়। বাড়ে পাকস্থলীর সমস্যার ঝুঁকি। দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দীর্ঘদিন থাকলে স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দেয়। যে কারণে হাঁটা-চলা এবং ভারসামন্য রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে জরুরিভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভিটামিন বি ১২ কতটুকু প্রয়োজন
ভিটামিন বি ১২ পানিতে দ্রবণীয় উপাদান। এর অর্থ হলো শরীরের চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত ভিটামিন প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়। এই চাহিদা বয়সের ওপর ভিত্তি করে কম-বেশি হয়। ০ থেকে ৬ মাস বয়স হলে প্রতিদিন ০.৪ মিলিগ্রাম, ৭ থেকে ১২ মাস বয়স হলে প্রতিদিন ০.৫ মিলিগ্রাম, ১ থেকে ৩ বছর বয়স হলে প্রতিদিন ০.৯ মিলিগ্রাম, ৪ থেকে ৮ বছর বয়স হলে প্রতিদিন ১.২ মিলিগ্রাম, ৯ থেকে ১৩ বছর বয়স হলে প্রতিদিন ১.৮ মিলিগ্রাম, ১৪ থেকে ৫০ বছর বয়স হলে প্রতিদিন ২.৪ মিলিগ্রাম, অন্তঃসত্ত্বা নারী হলে প্রতিদিন ২.৬ মিলিগ্রাম, স্তন্যদায়িনী মা হলে প্রতিদিন ২.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ১২ এর প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি হলে যা হয়
সারক্ষণ ক্লান্ত লাগা এবং দুর্বলতা ভিটামিন বি ১২ ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। পর্যাপ্ত ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে শরীরে লাল রক্ত কোষ তৈরি হয় না। যে কারণে শরীরে অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে না। ফলে দেখা দিতে পারে নিঃশ্বাসের সমস্যা। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়াও এই ভিটামিনের অভাবে সৃষ্টি হয়। এর ঘাটতি প্রভাব ফেলে বিভিন্ন স্নায়ুতে। এর মধ্যে অপটিক নার্ভও রয়েছে। ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতির কারণে ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
ভিটামিন বি ১২ মিলবে যেসব খাবারে
নিরামিষ ধরনের খাবারে ভিটামিন ১২ বেশি পাওয়া যায়। প্রাণিজ খাবারে এই ভিটামিন তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, দই, ডিম, বিভিন্ন ধরনের মাংস ও কলিজা, মাশরুম, স্যামন, টুনা ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, আস্ত শস্য, ডাল ও ঢেঁকি ছাটা চালে মিলবে এই ভিটামিন।