রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তপশিল সোমবার ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তপশিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তপশিল ঘোষণার পরপরই সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা আরো জোরেশোরে শুরু করেছেন। বিভিন্নভাবে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে নেমেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয় জন, জাতীয় পার্টির এক জন, বিএনপির তিন জন ছাড়াও জাসদ, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক জন করে প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া খেলাফত মজলিশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাকের পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাসহ পরিকল্পিত নগরায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন নগরবাসী। তারা বলছেন, যানজট, জলাবদ্ধতা ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিমুক্ত পরিচ্ছন্ন ও জবাবদিহিমূলক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর রংপুর মহানগরী এখন সময়ের চাওয়া। কৃষিভিত্তিক কলকারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থানের দাবি করেছেন অনেকেই। রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
দেখা গেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন রংপুর মহানগর সভাপতি সফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ। এসব প্রার্থী ইতিমধ্যে সরকারদলীয় মনোনয়ন চেয়ে নগরীতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগিয়েছেন। পাড়া-মহল্লায় সভা-সমাবেশও শুরু করেছেন। রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম এবং আরেক সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন। এর বাইরে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর নাম শোনা যাচ্ছে। কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রংপুর বিভাগীয় ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন মেয়র পদে নির্বাচনে লড়তে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন-বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। সভা-সমাবেশও করছেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার কথা কোথাও বলেননি। এ কারণে অনেকেই তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।
ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয়ভাবে বর্তমান মেয়র, মহানগর কমিটির সভাপতি ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সদ্য বহিষ্কৃত জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এ কে এম আব্দুর রউফ মানিকও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে পোস্টার-ফেস্টুন লাগিয়েছিলেন। দল থেকে বহিষ্কারের পর থেকে তিনি নীরব রয়েছেন।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলেও রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের দলের দুই-তিন জন নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু, মহানগর কমিটির সদস্য শিল্পপতি কাওসার জামান বাবলা, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু ও মহানগর বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান তুহিন। তবে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন কাওসার জামান বাবলা। এর বাইরে চরমোনাইর পির সমর্থিত ইসলামী আন্দোলনের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু, স্বতন্ত্রভাবে জামায়াত-সমর্থিত নেতা অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল, খেলাফত মজলিশের উপধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনি মেয়র পদে লড়বেন। তারা ইতিমধ্যে পোস্টার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন।