বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ খুব বেশি মূল্যসংযোজন করতে পারছে না। যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভালো। এর পরেও দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্য বেশ কম। এসব পণ্যের মূল্যসংযোজনও কম হওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পের চেয়ে উৎপাদনশীল অন্যান্য খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশ উচ্চ শুল্কহারের কারণে আমদানি ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। ফলে কোনো রপ্তানি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এর কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাপক উত্পাদন খরচ হচ্ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ পার্টিশিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন শীর্ষক এক প্রতিবেদন এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। আলোচক ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক জায়েদী সাত্তার এবং এডিবির আঞ্চলিক পরামর্শক রানা হাসান।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় পোশাক খাতনির্ভর। মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকার পরও অন্য শিল্প পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং জুতাশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশ শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক পেছনে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। এটি স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে আমাদের শুল্ক অনেক উচ্চ। এটি আলোচনা করে কমাতে হবে। তিনি বলেন, বাজেটের আলোচনা শুধু এক মাস নয়, আরো বিস্তৃত হতে হবে। শুধু সংসদ নয়, সংসদীয় কমিটি এবং সবার সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে। তিনি আরো পরামর্শ দেন যে, বাজেট আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি শুরু করা যেতে পারে।
রাজস্ব বাড়াতে করনীতির সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের ব্যয় মেটাতে রাজস্ব বাড়ানো প্রয়োজন। সে জন্য করনীতি নিয়ে আরো আলোচনা হওয়া দরকার। দেশে কর-জিডিপির অনুপাত কম। সেখানে উন্নতি করতে হবে। কিছু জায়গায় শুল্ক অনেক বেশি, তা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। আর রাজস্ব ঘাটতি সাধারণত ৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও এবারে তা বাড়লেও সেটা ৬ শতাংশের ওপরে হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্যানেল আলোচনায় পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ বিদ্যমান। এর মধ্যে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে রেষারেষির প্রভাবও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিকপথে রাখতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ভ্যালু চেইনে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, শুধু ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হিসাব করলে আমদানি ব্যয় ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর ফলে আমদানি শুল্কও বেড়ে গেছে। অর্থাৎ শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব।