ঈদুল আজহা সামনে রেখে শুক্রবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওইদিন ৫ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের টিকিট বেচা শুরু হয় শনিবার সকাল ৮টা থেকে। তবে দিনরাত স্টেশনে অপেক্ষা করেও মেলেনি সেই সোনার হরিণ। অনলাইনেও টিকিট নেই। অনেকেরই অভিযোগ, অনলাইনে সকাল ৮টায় টিকিটের জন্য ঢুকলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে রাখা হয়। পরে এক সময় দেখানো হয় ‘টিকিট শেষ’। তবে গতকাল কমলাপুর স্টেশনে ট্রলি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গিয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আগের ঈদে অনলাইনে টিকিট পেয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। এবার এক-দুজন পাওয়া গেছে।’এদিকে অনলাইনে টিকিট না পেয়ে যাত্রীরা ভিড় করছেন কাউন্টারে। তাদের কেউ কেউ আগের দিন থেকে লাইন ধরেও টিকিট ছাড়াই বাসায় ফিরতে হয়েছে। আবার অনেকে কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়ে রাজ্যের কষ্ট ভুলে হেসেছেন সুখের হাসি। গতকাল শনিবার ভোররাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের শিপু। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৬ জুলাইয়ের সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট পান তিনি। হাসিমুখে তাই শিপু বলেন, ‘টিকিট হাতে পাওয়ার পর কষ্ট ভুলে গেছি। এখন বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব।’ অগ্রিম টিকিটের আশায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরের শিব্বির মাহমুদ লাইনে দাঁড়ান শুক্রবার বিকালে। শনিবার সকালে টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন তিনিও। শিব্বির বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব। গতকাল (শুক্রবার) বিকালে এসে লাইন ধরেছি, যাতে টিকিট পাই। কারণ সড়কপথে যানজট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। ট্রেনের টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।’
সিরিয়াল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হয়। এর মধ্যেই সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হয় ৬ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। তবে কোনো কোনো কাউন্টারে ১০টার মধ্যেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। নারীদের একটি কাউন্টার ছাড়া পুরুষদের কাউন্টারগুলোতে সব টিকিট শেষ হয়ে যায় বেলা ১১টার মধ্যে। তবে টিকিট শেষ হয়ে গেলেও অনেকেই লাইন ছাড়েননি। আজ সকালে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট কেনার আশায় তারা সারাদিন ও রাতে স্টেশনেই থাকবেন বলে জানান।
রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল সকালে গিয়েছিলেন কমলাপুর স্টেশনে ট্রলি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে। রেলযাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনকে ৫০টি ট্রলি দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। অনলাইনে অগ্রিম টিকিট পাওয়া না যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘গতকালও আমরা টেলিভিশনে দেখলাম যে একজন বলছেন অনলাইনে টিকিট পেয়েছি, তাই এখানে এসে কষ্ট করতে হয়নি। গতবার কিন্তু এটা দেখা যায়নি। এবার কিন্তু এক-দুজন পাওয়া গেছে। রেসপন্স করছে।’
প্রতিদিন সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়া হয়। ঠিক ৮টায় অনলাইনে টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন যাত্রীরা। ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট সিলেক্ট করার পর শুধু ঘুরতে থাকে। তার পর কয়েক মিনিট কিছু সিট ফাঁকা দেখিয়ে পরে দেখানো হয় টিকিট শেষ অনলাইনে। ট্রলি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- এখন অনলাইনে নানা ধরনের প্রতারণা চলছে। কালোবাজারিরা অনেকগুলো সার্ভার নিয়ে আগেই হিট করছে। অনেক টিকিট তারা ডাউনলোড করছে। তার পর তারা বিক্রি করছে। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসগুলো হচ্ছে, কোথা থেকে হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে- এ জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা দরকার। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আমরা ত্রুটিগুলো ধরার চেষ্টা করব এবং আগামীতে যেন না হয়, সে ব্যবস্থা করব।’
টিকিটের জন্য কেউ কেউ ৩০ ঘণ্টার বেশি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করছেন। অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে থেকেও টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে প্রচণ্ড ভিড়। অনেকে অভিযোগ করছেন, টিকিট পাচ্ছেন না। এটা স্বাভাবিক। অনলাইনের টিকিটের জন্য প্রায় ছয় কোটি মানুষ হিট করছে। আমাদের চাহিদার তুলনায় কমসংখ্যক পরিবহন সক্ষমতাই এর কারণ। কাজেই বিষয়গুলোকে আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, যেন ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারি।’ অবকাঠামো না বাড়িয়ে শুধু কোচ কিনে এ অবস্থার উন্নতি করা যাবে না বলেও মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চাহিদা ও আমাদের যে সক্ষমতা, তার মধ্যে যে ফারাক তা যতক্ষণ পর্যন্ত কমাতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থেকে খুব বেশি উত্তোরণ করতে পারব না।’
এদিকে আজ ৩ জুলাই বিক্রি হবে ৭ জুলাইয়ের টিকিট। এভাবে ৪ জুলাই দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই মিলবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। এর বাইরে ৮ জুলাইয়ে ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের এবং ১১ জুলাই বিক্রি হবে ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট। ১১ জুলাই সীমিত পরিসরে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলবে। ঢাকায় ছয়টি স্টেশন এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট।