রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার অন্তর্গত করে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আরো জোরালো অবস্থান নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে মিলিত হচ্ছেন ইইউ শীর্ষ নেতারা। এদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেছেন, তার বাহিনী খেরসনের কিছু অংশও দখল করে নিয়েছে। গত শুক্রবারই পুতিন খেরসন দখলের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এখন এসব অঞ্চলের কোন অংশ রাশিয়া দখল করেছে তা নিয়েই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাশিয়ার পার্লামেন্টেও ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
গত সপ্তাহের একাধিক ঘটনা ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলকে একতরফাভাবে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছেন। এই ঘটনার জবাব ইউক্রেন দ্রুত সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদানের আবেদন করেছে। সে দেশের সেনাবাহিনী রুশ অধিকৃত এলাকার আরো অংশ নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হচ্ছে। নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের ওপর রহস্যজনক হামলাও ইউরোপের জরুরি অবকাঠামোর নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করতে শুক্রবার চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ইউক্রেনের জন্য অর্থনৈতিক, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা হবে। সেইসঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি থেকে ইউরোপের সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে আরো পদক্ষেপ স্থির করতে চান ইইউ নেতারা। দু-দুটি নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাল্টিক সাগর তথা ইউরোপের অন্য অংশে এমন জরুরি অবকাঠামোর সুরক্ষা আরো জোরদার করার জন্যও চাপ বাড়ছে।
রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে ইউরোপের দেশগুলো ইতিমধ্যেই তত্পরতা বাড়াচ্ছে। বেআইনিভাবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে একাধিক ইইউ দেশ রুশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করা শুরু করেছে। জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্কের এমন কূটনৈতিক পদক্ষেপের পর অন্যান্য কিছু দেশও চলতি সপ্তাহে এভাবে প্রতিবাদ জানাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ রবিবার টেলিফোনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে সে দেশের জন্য সহায়তা ও সমর্থন চালিয়ে যাবার আশ্বাস দেন। জার্মানি, ডেনমার্ক ও নরওয়ে ইউক্রেনের জন্য আরো ১৬টি সাঁজোয়া হাউইত্সার আর্টিলারি সিস্টেম সরবরাহের যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে ইউক্রেনকে স্লোভাকিয়ায় তৈরি ‘জুজুনা-২’ বন্দুক সরবরাহ করতে এই তিন দেশ ৯ কোটি ২০ লাখ ইউরো মূল্য বহন করবে। তবে আগামী বছরের আগে সেই বন্দুক সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট সপ্তাহান্তে প্রথমবার ইউক্রেন সফর করার পর এই ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউক্রেনের ভূখণ্ডের একাংশ সরাসরি রাশিয়ার অন্তর্গত করার ঘোষণার পর কিয়েভ সরকার ইউরোপ তথা পশ্চিমা জগতের কাছ থেকে আরো অস্ত্র ও ভারী সামরিক সরঞ্জাম চাইছে। কিন্তু ব্যাটেল ট্যাংকের মতো আক্রমণাত্মক সামরিক সরঞ্জাম দিতে দ্বিধা করছে আমেরিকাসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ। ইউক্রেন জার্মানির কাছে লেপার্ড ব্যাটেল ট্যাংক চাইলেও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলত্স এখনো এমন সরঞ্জাম পাঠাতে অস্বীকার করছেন। তিনি সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী লামব্রেশট ইউক্রেন থেকে ফিরে আবার বলেছেন, যে নানাভাবে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা চালিয়ে যাওয়া হলেও জার্মানি তথা ন্যাটো যাতে সরাসরি এই সংঘাতের অংশ না হয়ে পড়ে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। উল্লেখ্য, ওডেসা সফরের সময় রুশ হামলার আশঙ্কায় সাইরেন শুনে জার্মান মন্ত্রীকে দু-দুবার বাংকারে আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা।
খেরসনের কিছু অংশ পুনর্দখল কিয়েভের
ইউক্রেনে রুশ অধিকৃত খেরসন অঞ্চলের দুটি এলাকা রুশ বাহিনীর হাত থেকে পুনরুদ্ধারের দাবি করেছেন জেলেনস্কি। এলাকাগুলো হচ্ছে আরখানহেলস্কে এবং মাইরোলিউবিভকা। রবিবার রাতে নিয়মিত ভাষণে যুদ্ধে নিজেদের অগ্রগতি নিয়ে এই তথ্য জানান জেলেনস্কি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এর আগে জেলেনস্কি তার ভাষণে বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাফল্য শুধু দনেত্স্ক অঞ্চলের লিম্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।