রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় স্যাকি বিমানঘাঁটিতে বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় আটটি রুশ বিমান ধ্বংস হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, বিমানঘাঁটিটি ‘ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ঘাস পুড়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে দোনেৎস্কের পিস্কি শহরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। এদিকে ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করেছে ইউরোপ।
গত মঙ্গলবার ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার ওই বিমানঘাঁটিতে হামলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেখানে অন্তত ১২টি বিস্ম্ফোরণ হয়েছে। এতে একজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্ল্যানেট ল্যাবের স্যাটেলাইট চিত্রের বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি জানায়, বিমানবন্দরটির রানওয়ে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেনি ইউক্রেন। তবে এর ধরন দেখে মনে হয়েছে, এটি পরিকল্পিত হামলা। বুধবার ইউক্রেন সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী এ হামলা চালায়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবারের মতো বড় ধরনের হামলার শিকার হলো রাশিয়া।
বিমানঘাঁটিতে হামলার উত্তেজনার মধ্যে ইউক্রেনের দোনেৎস্কে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। আলজাজিরা জানায়, গতকাল দোনেৎস্কের পিস্কি শহরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয়দের তীব্র লড়াই চলে। রুশপন্থি বিদ্রোহী সংগঠন দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের দাবি, রুশ বাহিনীকে নিয়ে তারা পিস্কির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা শহরটি হাতছাড়া হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এ প্রেক্ষাপটে জাপোরিঝঝিয়ায় ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে একটি শহরে ১০টি রকেট হামলা হয়। বুধবার ওই হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন বেসামরিক ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন।হামলার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া একে অপরকে দোষারোপ করছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পারমাণবিক কেন্দ্রটির ভেতরে পাঁচ শতাধিক রুশ সেনা অবস্থান করছেন। সেখানে ইউক্রেনের প্রযুক্তিবিদরাও কাজ করছেন। যুদ্ধ শুরুর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দখল নেয় রাশিয়া। রকেট হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য। দেশটি ইউক্রেনকে ৮০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, রাশিয়ার ভারী অস্ত্রের হামলার মধ্যে এসব অস্ত্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় শক্তি জোগাবে। ইউক্রেনের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাত থেকে রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ কার্যকর হয়েছে। রাশিয়ার ওপর পঞ্চম দফার নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে চার মাস আগে ইইউ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইইউ কমিশন বলছে, এতে রাশিয়া বছরে প্রায় ৮০০ কোটি ইউরো হারাবে। রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করলেও জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে ইইউ দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নীতিগতভাবে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত সরবরাহে কোনো বাধা দেবে না ব্রাসেলস। তা ছাড়া হাঙ্গেরির মতো দেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে ইইউ। চারদিকে ভূবেষ্টিত দেশ হিসেবে হাঙ্গেরি পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে।
এদিকে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি অব্যাহত আছে। গতকালও ইউক্রেনের চরনোমরস্ক বন্দর থেকে খাদ্যপণ্যবাহী একটি জাহাজ ছেড়ে যায়। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ অচলাবস্থায় কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে দুই পক্ষের সায়কে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে ‘রাশিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে’ উল্লেখ করে লাটভিয়ার পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, পার্লামেন্ট রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং একই ধরনের মনোভাব প্রদর্শনের জন্য অন্য দেশগুলোকেও আহ্বান জানাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে ডেনমার্ক জানিয়েছে, ইউক্রেনকে আরও আর্থিক সহায়তা দেবে তারা। কোপেনহেগেনে এক সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিট্টি ফ্রেডেরিকসেন এ ঘোষণা দেন।