ডলারসংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে মঙ্গলবার সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সোমবার বিক্রি করেছে পাঁচ কোটি ডলার।
সূত্র জানায়, চলতি আগস্টের দুই দিনে রিজার্ভ থেকে বাজারে ছাড়া হয়েছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের এক মাস দুই দিনে রিজার্ভ থেকে ছাড়া হয়েছে ১১৮ কোটি ডলার।
এর আগে গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ছাড়া হয়েছে ৭৬৫ কোটি ডলার।
এদিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৮ থেকে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায়। মঙ্গলবার এই দাম ছিল ১০৯ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে।
খোলাবাজারে ডলারের কারসাজি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতসহ বেশ কয়েকটিকে শোকজ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি ও পদক্ষেপের কারণে খোলাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। তবে দেশে ডলারের সংকট এখনো বিদ্যমান থাকায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। ডলারসংকটের কারণে গতকাল ব্যাংকগুলো ১১২ টাকার বেশি দামে প্রবাস আয় সংগ্রহ করেছে। আর বড় এলসির ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় শোধ করা হয়েছে ১০৭ টাকায়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্ত ব্যাংকে ডলারের দাম ৯৫ টাকার কম হলেও আমাদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে। ’
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। গত মে মাসের শুরুর দিকে এই দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে আট টাকা ২৫ পয়সা।
রিজার্ভ কমছে
ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ চার হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। ওই মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৬৫ শতাংশ, যে কারণে ওই মাস থেকেই রিজার্ভ কমতে থাকে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ কমে চার হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে। মঙ্গলবার রিজার্ভ আরো কমে তিন হাজার ৯৫৭ কোটি ডলারে নেমে আসে।
এদিকে জুলাইয়ে এলসি খোলার হার কমলেও জুনে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। করোনার পর বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিদেশভ্রমণ ও চিকিৎসা খাতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ আরো বেড়েছে।
রপ্তানি আয় ডলারে সংরক্ষণের সুযোগ
রপ্তানি আয়ের স্থানীয় মূল্য সংযোজন অংশ ১৫ দিনের জন্য ডলারে সংরক্ষণের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রপ্তানিকারকের আমদানি দায় বিনিময়জনিত ঝুঁকি ছাড়াই নিজের বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পরিশোধ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত সব অনুমোদিত ডিলারের প্রধান কার্যালয় ও প্রিন্সিপাল অফিসে পাঠিয়েছে।