ফরিদ সুমন
সুমা পারভীন, ঢাকায় জন্ম নেয়া বিক্রমপুরের মেয়ে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
জীবন ধারার প্রবাহে একদিন তিনি গুটিগুটি পায়ে চলে যান এক অচিন দেশের নতুন পরিবেশে, সেখানে শক্ত মাটির গভীরে শিকড় গেথে চলছেন ছাব্বিশ বছর ধরে।
ছাব্বিশ বছর আগের সেই ভিরু পায়ে পথচলা বালিকা আজ যুবতী হয়েছেন এবং একই সাথে সাতার কাটতে নেমে পড়েছেন নন্দন-তত্ত্বের মহা-সমুদ্রে। আজ তার নান্দনিক মন ও শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় খুব সাধারণ ও পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র রূপ নিচ্ছে একএকটা শিল্পকর্মে। প্রতিদিনই এমন শিল্পকর্মে ভরে উঠছে তার চারদিক, রাঙিয়ে তুলছেন তার চারপাশে জড়ো হওয়া প্রতিটা মন।
প্রচেষ্টায় প্রতিভা জন্ম নেয়, তার একটা প্রমান সুমা পারভীন। পুরাপুরি নিজের আগ্রহ ও চেষ্টায় তিনি আজ একজন পুরষ্কারপ্রাপ্ত নান্দনিক মানুষ।
কোভিডের প্রথম ধাক্কায় সন্তানদের জন্য কাজ ছেড়েছেন। ব্যাস্ত জীবন থেকে একটু মুক্তি পেয়ে পরিত্যাক্ত কাপড়চোপড় আলাদা করতে গিয়ে একদিন চট করে মাথায় এক আইডিয়া ঢুকে গেল। সেই আইডিয়াই বারবার বলতে থাকল এইগুলোতো এক সময় নান্দনিক ছিলো তুমিতো এগুলোকে আবার সে চেহারায় ফিরিয়ে নিতে পারো।
যেই ভাবনা সেই কাজ, রিসাইকেল-বিনে না রেখে পরিত্যাক্ত সব কিছুই তুলে রাখলেন স্টোর রুমে, এভাবেই দুই সন্তানের জননী নান্দনিক জগতে ডুবে গেলেন। জন্ম হতে থাকলো এক শিল্পের জগত, এভাবে তিনি সমৃদ্ধ করলেন নিজেকে ও শিল্পকে। ফেলে দেয়া জুতা তার ছোঁয়ায় নান্দনিক রূপ নিয়ে আশ্রয় পেয়েছে হয়তো কোন এক দেয়ালে অথবা কর্ণার র্যাকে। ছিড়ে যাওয়া কাপড় হয়তো রূপ পাল্টে আবার ব্যাবহার উপযোগি হয়ে যাচ্ছে অথবা কোন শোপিসের অংশ হয়ে ঘর সজ্জার উপকরণে রুপান্তরিত হচ্ছে। মনের সাথে হাতের এ এক মজার খেলা। এ সবই তাকে শিখিয়েছে মন, কোন প্রতিষ্ঠান নয়।
এক মজার খেলায় মেতে “সুমা” মনকে রাঙাচ্ছেন, একই সাথে রাঙাচ্ছেন ঘরকেও। আর তার কাজে প্রধান উৎসাহদাতা মানব সেবায় নিয়জিত লাইফপার্টনার শাকিল মজুমদার ও দুই কন্যা।
নান্দনিক মন গন্ডিবদ্ধ হতে চায়না, তাই ব্যাংক কর্মকর্তার মেয়ে সুমাকেও গন্ডিবদ্ধ করা যায়নি। এখন মেতেছেন চিত্রকলা নিয়ে। আর এই চিত্রকালায়ও যুক্ত হয়েছে সেই পরিত্যাক্ত চরিত্রগুলো, তারা এখানেও জীবন পাচ্ছে, পাচ্ছে নান্দনিক রুপ, অগণিত স্বপ্ন ফুটে উঠছে তার ক্যানভাসে।
বাংলাদেশের অন্যতম দিকপাল ড. কুদরাত-ই খুদা-র নাতনি ফ্লোরিডায় বাংলা গানের বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী “নওশীন মনযুর” এর গুনমুগ্ধ সুমা স্বপ্ন দেখেন একদিন তার কল্পনা ছড়িয়ে যাবে সবার মনে, সবাই পেতে চাবে তার স্বপ্নের ছোঁয়া। এই ভাবনা থেকেই এরই মধ্যে ফ্লোরিডায় ৩টা একক এবং ভারত, ফ্রান্স ও জার্মানিতে একটা করে যৌথ প্রদর্শনী করেছেন আর এসব প্রদর্শনিতে তার সকল ক্যানভাস মূহুর্তেই বিক্রয় হয়ে গিয়েছে। যদিও প্রতিটা আর্টওয়ার্ক বিক্রয় করতে তার কষ্ট হয়েছে।
মাকে হারিয়েছেন তিন বছর আগে, এর পর থেকে মাকে দেখার অজুহাতে আর জন্মভূমীতে যাওয়া হয় না, মায়ের দায় যেমন শোধ হয় না তেমন জন্মভূমির দায়ও শোধ করা যায় না। তাই তার এখন ইচ্ছে এক সময় ভীরু পায়ে ছেড়ে যাওয়া জন্মদাত্রীর ক্যানভাসে একটা একক প্রদর্শনী করে সে দায় কিছুটা শোধ করা।
শিল্পী মন এখন মেতেছে চিত্রকলায়, শিল্পী সুমার কথা শিল্পেই যখন জীবন বেধেছি তবে চিত্রকলা কেন নাগালের বাইরে থাকবে? তাই এখন বড় একটা সময় পেইন্টিংয়ের ক্যানভাসে কাটান। তার হাতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য চিত্র।
তার কাজের স্বীকৃতি সরূপ পেয়েছেন বহু প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পত্র। প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের গৌরভ বাড়িয়ে চলছেন নিরন্তন।
ইতি মধ্যে তিনি প্রচ্ছদ কর্মেও হাত পাকিয়েছেন, শিল্পের প্রতিটা সেক্টরে নিজের হস্ত চিহ্ন রেখে প্রবাসে থেকেও নিজের ও দেশের অর্জনকে সমৃদ্ধ করে চলছেন।
কার্ডবোড, নিউজ-পেপার, প্লাষ্টিক, কাঁচের বোতল,পুরাতন বই, সিডি, ডিমের খোসা,মাছের কাটা, গাছের ফুল, পাতা ইত্যাদি উপাদান দিয়ে গড়ে তোলা তার নান্দনিক সমুদ্রে ডুব দিতে চাইলে ঘুরে আসুন uniquehandicraft1.com থেকে।