ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এর মালিকপক্ষ এবং কোচ এরিক টেন হাগের কড়া সমালোচনা করে যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- তারপর সবকিছু একরকম অনুমতিই ছিল। হলোও তাই। পর্তুগিজ তারকার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল প্রিমিয়ার লিগের দলটি।
ক্লাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া মঙ্গলবারের (২২ নভেম্বর) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ইউনাইটেড অবশ্য বিবৃতিতে লিখেছে, দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সপ্তাহখানেক ধরে ক্লাব ও খেলোয়াড়ের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এমন কিছুর সম্ভাবনা ছিলই।
জুভেন্টাসে তিন মৌসুমের পাট চুকিয়ে গত বছর অগাস্টে একরকম নাটকীয় দলবদলে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফেরেন রোনালদো। ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি; কিন্তু ঘরের ছেলের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে যাবে, এমন কিছু মেনে নিতে পারেনি ইউনাইটেড। শেষ মুহূর্তে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সিদ্ধান্তে মত বদলে পুরনো ঠিকানায় ফেরেন পর্তুগাল অধিনায়ক।
ইউনাইটেডে দ্বিতীয় মেয়াদের অভিষেক মৌসুমটা দলগতভাবে ভালো না কাটলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিলেন রোনালদো। ছিলেন মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু দল শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করতে না পারায় এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারছে না তারা। আর এই কারণে রোনালদো গত গ্রীষ্মের দলবদলে অন্য কোথাও যেতে চাচ্ছিলেন বলে খবর আসে। গুঞ্জন বারবার জোরাল হলেও ক্লাব তাকে ছাড়তে ছিল নারাজ। অবশ্য, রোনালদো কখনোই নিজ মুখে তেমন কোনো ইচ্ছার কথা বলেননি।
চলতি মৌসুমের শুরুতেই সবকিছু তড়িৎ বদল যেতে শুরু করে। দুই ম্যাচ পরই টেন হাগের পছন্দের ‘দ্বিতীয় তালিকায়’ পড়ে যান ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো। অবশ্য তার পারফরম্যান্সও ভালো ছিল না তেমন। বয়সের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
শুরুর একাদশে জায়গা হারানোর পাশাপাশি এমন অনেক ম্যাচ গেছে, বদলি নামারও সুযোগ পাননি তিনি। এতে মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে তাকে। এজন্য পেতে হয় নিষেধাজ্ঞার শাস্তি, গুনতে হয় জরিমানাও। এরপরই গত সপ্তাহে ব্রডকাস্টার পিয়ার্স মর্গ্যানকে দেওয়া দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে মনে পুষে থাকা সব ক্ষোভ ঝাড়েন রোনালদো।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ নাকি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। টেন হাগের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে রোনালদো বলেন, এই ডাচ কোচ তাকে শ্রদ্ধা করেন না বিধায় তিনিও কোচকে সম্মান করেন না। আর ক্লাবটির মালিক গ্লেজার পরিবারকে নিয়ে তারকা ফরোয়ার্ড বলেন, তারা ক্লাবের উন্নতি ও খেলার মান নিয়ে একদমই ভাবে না।
এমন সব মন্তব্য করার পর রোনালদো-ইউনাইটেডের কাগজের সম্পর্কেও ভাঙন যে অবধারিত, তা বলা যায় নিশ্চিতই ছিল। ক্লাবের বিবৃতিতে সেটা কেবল আনুষ্ঠানিক রূপ পেল। যে আঙিনায় রোনালদোর বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু, সেখানে শেষটা হলো খুব খারাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে ক্লাবে তার অবদানকে অল্প কথায় ঠিকই স্মরণ করেছে ইউনাইটেড। দুই মেয়াদে দলের হয়ে ৩৪৬ ম্যাচে ১৪৫ গোল করা তারকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ক্লাব। ক্যারিয়ারে ভবিষ্যতের জন্য জানিয়েছে শুভকামনা।
বর্তমানে কাতার বিশ্বকাপ মিশনে জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন রোনালদো। ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তির ভাঙা নিয়ে কিছু জানাননি তিনি। বিশ্বকাপ শেষে আগামী জানুয়ারির দলবদলে নতুন ঠিকানা খুঁজতে হবে তার।