নিয়মিত স্কুলে যেত মেয়েটি। কিন্তু হঠাৎ এক দিন বিপর্যয় ঘটে গেল তার জীবনে। ধর্ষণের শিকার হলো সে। লজ্জায় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিল ছাত্রীটি। ১৭ দিন হলো সে আর স্কুলে যায় না। মেয়েটির স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ঘটনাটি ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের। কিশোরীটি সেখানকার একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবার অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ ক্যাম্পের এসআই ধর্ষণের বিষয়টি ৫ লাখ টাকায় রফার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ছাত্রী ও তার পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ১৪ দিন কালক্ষেপণ করেছেন।
৯ আগস্ট দুপুরে মাগুরখালী ইউনিয়নের একটি গ্রামে মুদি দোকানি বিজন রায় ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে বলে জানা যায়। স্কুলছাত্রী জানায়, ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে বিজনের মুদি দোকানে সুচ কিনতে যায়।
এ সময় দোকান বা আশপাশে কোনো লোকজন ছিল না। সুচটি নিচে পড়ে গেছে জানিয়ে বিজন তাকে (ছাত্রী) দোকানের ভেতর এসে সুচটি খুঁজে দিতে বলে। মেয়েটি দোকানে ঢুকলে বিজন তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে তারই ওড়না দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে ধর্ষণ করে। ছাত্রীটি চিৎকার করলে বিজন দোকান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মেয়েটি আক্ষেপ করে জানায়, তার বাবা গরিব বলে এমন একটি ঘটনার পরও কেউ তাদের সহযোগিতা করছে না। ১০ আগস্ট পুলিশ তাদের বাড়ি এসে সব ঘটনা শুনে চলে যায়। এ ঘটনা তার স্কুলসহ এলাকার সবাই জেনে গেছে বলে সে লজ্জায় স্কুলে যাওয় বন্ধ করে দিয়েছে।
স্কুলছাত্রীর বাবা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, তাঁর মা-হারা মেয়েটির সর্বনাশ করেছে বিজন। তিনি তাঁর মেয়েসহ ১০ আগস্ট থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করেনি। মামলা করতে চাইলেও মামলা নেয়নি। এমনকি অভিযোগও নেয়নি। মেডিকেলে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়েও পরামর্শ দেয়নি।
পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গত সোমবার দুপুরে থানায় অভিযোগ দেন। কিন্তু দু’দিন পর বুধবার মামলাটি রেকর্ড হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যানও তাঁদের সহযোগিতা করেননি। বিজনের ছেলে জয়ন্ত রায় তাঁকে বলেছেন, কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁদের অধিকাংশই ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযুক্ত বিজন স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছের লোক। ধর্ষণের শিকার হয়ে মেয়েটি যে লজ্জায় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তা নিশ্চিত করে তাঁরা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা দরিদ্র বলে বিচার পাচ্ছে না। ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার হওয়া উচিত।
অভিযুক্ত বিজন রায় ও তার ছেলে জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কল রিসিভ করেনি। তাদের ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা জবাব দেয়নি। বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে জয়ন্ত রায়ের ভাইয়ের স্ত্রী সুষমা সরকার বলেন, তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তারা কে কোথায় আছে, তাও তিনি জানেন না।
মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা বলেন, একই এলাকায় তাঁর বাড়ি বলে এ বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেননি। টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
মাগুরখালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. আছাদুজ্জামানও টাকা-পয়সা নিয়ে বিষয়টি রফাদফার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুফিয়ান রুস্তম বলেন, ১৭ দিন পর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
ডুমুরিয়া থানার ওসি কনি মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ১০ আগস্ট ভুক্তভোগীর বাবা থানায় এসে মামলা করতে চাইলেও মামলা কিংবা অভিযোগ নেওয়া হয়নি কেন? এমনকি তাঁদের মেডিকেলে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়েও কেন পরামর্শ দেওয়া হয়নি। কেন ঘটনার ১৪তম দিনে এসে মামলা নেওয়া হলো এবং ১৬তম দিনে তা রেকর্ড করা হলো?
মোবাইল ফোনে তিনবার কল করা হলেও প্রতিবার ওসি ব্যস্ততার কথা বলে দ্রুত কল কেটে দেন। সব প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি শুধু বলেন, ভুক্তভোগী থানায় যখন মামলা করতে এসেছে, মামলা নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভুক্তভোগীকে মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।