সমুদ্র উপকূলীয় লবণ চাষের জমিকে মাছের ঘের হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই লবণ চাষ প্রায় দুই মাস বিলম্বে শুরু করতে হচ্ছে। মাছ চাষের কারণে জমির লবণাক্ততা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফলে লবণ উৎপাদনও কম হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, লবণ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যদি খাল খননের মাধ্যমে নাব্য বৃদ্ধি করা যায় এবং মাছ চাষের সময় অক্টোবর পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে বছরে অন্তত ১০/১২ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন বাড়ানো যাবে। কিন্তু সরকারিভাবে লবণ শিল্প উপেক্ষিত হচ্ছে।
দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও বাঁশখালী এলাকায় লবণের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে কক্সবাজার, মহেশখালী ও চকরিয়া এলাকায় লবণ আবাদের জমিতে মাছের ঘের হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাছের চাষ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, মাছের চাষে মিঠা পানির ব্যবহার হয়ে থাকে। আর লবণ চাষে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা হয়। মাছের চাষের কারণে জমিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত মিঠা পানি আটকে রাখা হয়। এরপর লবণ চাষের জন্য ঘের থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকে। মিঠা পানি ছেড়ে দেওয়ার পর জমিতে পুনরায় লবণাক্ততা ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগে। ফলে লবণ চাষ পিছিয়ে যাচ্ছে। যেসব জমি মাছের ঘের হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, সেসব জমিতে নভেম্বরের আগেই লবণ উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে।
জানা যায়, কুতুবদিয়ায় সবার আগে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে কুতুবদিয়া থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ অন্যান্য জমি থেকে লবণ আসতে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় লাগবে। জমিতে কৃত্রিমভাবে লবণাক্ততা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগে। জানতে চাইলে বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের ডিজিএম জাফর ইকবাল ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘মাছ চাষের কারণে লবণ চাষ বিলম্বে শুরু হচ্ছে। লবণ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সম্প্রতি বৈঠকে মাছের ঘের থেকে পানি অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া জন্য দাবি জানিয়েছেন, যাতে চিংড়ি চাষের সময় বেঁধে দেওয়া যায়। খালের নাব্য কমে যাওয়ায় লবণ চাষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা খাল খনন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি।’
সমুদ্র উপকূলীয় ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। এই চাষের সঙ্গে ৩২ হাজার চাষির জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। সমুদ্র থেকে অনেকটা ভেতরে জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। খাল দিয়ে পানি লবণ চাষের জমিতে আসে। কিন্তু খালগুলো ভরাট হয়ে নাব্য কমে গেছে। এতে সাগর থেকে লবণাক্ত পানি জমিতে পৌঁছা বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু খাল খননের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কক্সবাজারের ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ বলেন, চিংড়ি ঘেরের কারণে লবণ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণ চাষ দুই-তিন মাস পিছিয়ে যাচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।