ঝালকাঠিতে ৬ র্যাব সদস্যর বিরুদ্ধে কলেজ ছাত্র লিমন হত্যাচেষ্টা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দাখিল করেছেন তার মা হোনোয়ারা বেগম। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দাখিল করা হয়। বিচারক এএইচএম ইমরুনুর রহমান শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য্য করেছেন। লিমনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বরিশাল র্যাব-৮ এর সদস্যরা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে লিমনের বাম পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় লিমনের মা বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল বরিশাল র্যাব-৮ এর ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ৬ র্যাব সদস্যের নামে ঝালকাঠি আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করেন রাজাপুর থানার এসআই আব্দুল হালিম তালুকদার। তিনি ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং র্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন।
লিমনের মা হোনোয়ারা বেগম ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দাখিল করেন। আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। হেনোয়রা বেগম নারাজী খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রিভিশন দায়ের করেন (রিভিশন নম্বর ৩৫/১৩)। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসকেএম তোফায়েল হাসান রিভিশন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা মামলাটি তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পিবিআইকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সত্য, তবে কারা তাকে গুলি করেছে তার কোনো সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সোমবার লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম আদালতে নারাজি দাখিল করেন।
লিমনের মায়ের দাবি, তার ছেলে কোনো সন্ত্রাসী ছিলো না। একটি ভালো ছেলেকে র্যাব গুলি করে পঙ্গু করেছে। তিনি সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার দাবি করেছেন।
র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক পা হারানো লিমন ২০১৩ সালে এইচএসসি, ২০১৮ সালে আইন বিষয়ে অনার্স, ২০১৯ সালে এলএলএম পাস করেন। ২০২০ সালে লিমন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন।
লিমন সাংবাদিকদের বলেন, র্যাব আমাকে অন্যায়ভাবে গুলি করে পঙ্গু করেছে। আমি অনেক কষ্ট করে মানুষের ভালোবাসায় পড়ালেখা শেষ করেছি। আমার পা হারানোর কষ্ট এখনও ভুলতে পারছি না। যতদিন বেঁচে আছি, যারা আমাকে পঙ্গু করেছে তাদের বিচার দাবি করে যাবো।
২০১১ সালে ঘটনার পর র্যাব লিমনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্রআইন এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছিলো। ২০১৮ সালে মামলা দুটিতেই লিমনসহ সকল আসামিরা আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলো। ঘটনার শুরু থেকে লিমনকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।