ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের বেসামরিক লোকদের অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।কয়েক দিনের মধ্যে রুশ সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে তীব্র লড়াই হতে পারে এমন আভাস দিয়ে রোববার রাতে তিনি এই নির্দেশ দেন।জেলেনস্কি বলেন,এখন যত বেশি মানুষ দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে যেতে পারবেন,তত কম লোক হত্যা করার সময় পাবে রুশ সেনাবাহিনী।আমরা সেখানকার বাসিন্দাদের জীবন বাঁচাতে এবং রাশিয়ার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।দোনেৎস্কের গভর্নরের বরাত দিয়ে জেলেনস্কি জানান,যুদ্ধ চলছে এমন এলাকায় এখনও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ আটকে আছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে,দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনী ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং সেখানে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। রাশিয়া ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
জেলেনস্কি এমন এক সময়ে এই বক্তব্য দিলেন,যখন রাশিয়া – সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেৎস্কের একটি অংশে ৫০ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে মৃত্যু ও ৭৩ জন আহত হওয়ার ঘটনায় তদন্তের জন্য জাতিসংঘ এবং রেড ক্রস কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাশিয়া।নিহত ৫০ যুদ্ধবন্দির একটি তালিকা প্রকাশ করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত হিমার্স রকেট ব্যবস্থা দিয়ে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি কারাগারে হামলা করেছে ইউক্রেন।এই ঘটনার একটি নিরপেক্ষ তদন্তকে স্বাগত জানাবে মস্কো।ওলেনিভাকা নামে ওই কারাগারে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের রাখা হয়েছিল।এদের মধ্যে আজভ ব্যাটালিয়নের যোদ্ধারাও ছিলেন।তবে এমন অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ।ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলছে,এ হামলা রাশিয়া চালিয়েছে।যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ঢাকতে রাশিয়াই কারাগারটিতে হামলা করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে,তদন্ত করার জন্য তাদের বিশেষজ্ঞদের দল প্রস্তুত রয়েছে।দি ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলছে,আহত সেনাদের সরিয়ে নিতে তারা সহায়তা করবে।রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে তারা কারাগারটিতে প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে,তবে এখনও তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের রুশ দূতাবাস এক টুইট বার্তায় লিখেছে,ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে একটি ‘অপমানজনক মৃত্যু’ প্রাপ্য।তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত,তবে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে নয় বরং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে।কারণ তারা প্রকৃত সৈনিক নয়।এই টুইটের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাইকোলাইভে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী।রোববার রাতে শহরের একটি হোটেল,স্পোর্ট কমপ্লেক্স ও স্কুলে হামলা হয়েছে বলে জানান মেয়র আলেক্সান্ডার সেনকেভিচ।এই হামলা শহরটিতে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে শক্তিশালী হামলা বলে উল্লেখ করেন তিনি।তবে এই ব্যাপারে মস্কোর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।কৃষ্ণসাগরের কাছে হওয়ায় মাইকোলাইভ শহরটি ইউক্রেনের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।রাশিয়াও এই শহরগুলো দখল করতে হামলার গতি বাড়িয়েছে।
যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেই ওপেক প্লাস গ্রুপের সদস্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো আগামী বুধবার একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।উদ্দেশ্য বাজার ব্যবস্থাপনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে একটি একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। এতে বিশেষ করে তেলের দাম কমাতে আরও তেল উত্তোলন এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ম্ফীতি মোকাবিলায় সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে জানা গেছে,এমন প্রস্তাবে সায় নেই রাশিয়ার।জোটের সদস্য দেশগুলো দৈনিক প্রায় ২.৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছে,যা গত মে মাসের পরিকল্পনার চেয়েও কম।এদিকে জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে ওপেক প্লাস জোটের ওপর চাপ বাড়ছে।আগামী বুধবারের বৈঠক হবে জোটের সদস্য দেশগুলোর জন্য এ নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ।