আগামী বছর থেকে তিনটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই ছাপা হবে। বই লেখায় বিলম্ব হলেও দ্রুততার সঙ্গে কাজ মোটামুটি এগিয়ে নিয়ে আসছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু চিন্তার ভাঁজ অন্য কোথাও—লোডশেডিং। এছাড়া কাগজের সংকট তো আছেই। লেখকদের কাছ থেকে নতুন বই দেরিতে পাওয়ায় ছাপার কাজও দেরিতে শুরু হবে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৩ কোটির বেশি বই ছাপানো হবে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে ৯ কোটি আর মাধ্যমিক পর্যায়ে সাড়ে ২৩ কোটির বেশি রয়েছে।
সারা দেশে যেভাবে লোডশেডিং চলছে তা অব্যাহত থাকলে বা আরো বাড়লে বই ছাপার ক্ষেত্রে বিপর্যয় হতে পারে এমনটি দাবি করেছেন বিনা মূল্যের বই ছাপার কাজে নিয়োজিত প্রেস মালিকরা। এনসিটিবিও বলছে, এভাবে লোডশেডিং হলে যথাসময়ে বই দেওয়া সম্ভব হবে না।
বর্তমানে ঢাকা শহরে দৈনিক লোডশেডিং ৩-৪ ঘণ্টা। আর ঢাকার বাইরে লোডশেডিং সর্বনিম্ন ৩ ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে এই লোডশেডিংই এনসিটিবির কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করেছে। ঢাকায় ৬০ শতাংশ প্রেস রয়েছে। আর ঢাকার বাইরে প্রেস ৪০ শতাংশ। প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন, লোডশেডিং না কমালে বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলে যথাসময়ে বই দেওয়া যাবে না।
বিষয়টা বিবেচনায় এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল এই চিঠি বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।
চিঠিতে সরকারের এই অগ্রাধিকার কাজটি যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য প্রেস এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়। এই অনুরোধের সঙ্গে প্রেসের নাম ও সংশ্লিষ্ট ঠিকানাও সরবরাহ করা হয়। এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যথাসময়ে বই দিতে চাই। এ লক্ষ্যেই কাজ করছি।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘এবারের মূল সংকট তিনটি। সেগুলো হলো—বিদ্যুৎ, কাগজ ও সময়। তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রেসমালিকরা। বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেল দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রেস চালানো যায়। কিন্তু ডিজেল দিয়ে প্রেস চালাতে যে ব্যয় হবে তাতে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে প্রেসমালিকদের।’ এ কারণে প্রেসমালিকরা বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করবেন। আর এতেই হবে বিপর্যয়। যথাসময়ে বই দেওয়া যাবে না—এমনটিই জানিয়েছেন এক প্রেসমালিক।
তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবির বইয়ের জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ দরকার। কিন্তু এই কাগজ তৈরির জন্য মূল উপাদানের (পাল্প) সংকট রয়েছে। প্রথমত একসঙ্গে সরকার বিদেশ থেকে অধিক পরিমাণ পাল্প আমদানির ক্ষেত্রে আপত্তি দেয়। এছাড়া ডলারের মূল্য এবং পাল্পের মূল্য ওঠানামার কারণে পেপারমিলগুলো ঝুঁকি নিয়ে একসঙ্গে অধিক পরিমাণ পাল্প আমদানিও করতে চাইছে না। এছাড়া এত দেরিতে এসে সম্মতিপত্র (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দিয়েছে, সে সময়ের মধ্যে বই ছাপা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, যথাসময়ে বই দেওয়া যাবে না। কারণ বই ছাপার কাগজের ব্যাপক সংকট রয়েছে। কাগজ ছাপার মূল উপাদান পাল্পেরও সংকট রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেওয়ায় পাল্প আমদানিও করতে পারছে না পেপার মিলগুলো।
প্রেসমালিকরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী, টেন্ডারে অংশ নেওয়ার জন্য প্রেসমালিকের কাছে সম্মতিপত্র (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) চাওয়া হয়। সম্মতিপত্র চাওয়ার পর দরদাতারা অন্তত এক সপ্তাহ সময় পান। এরপর তারা আরো ২৮ দিন সময় পান চুক্তি করার জন্য। দরদাতারা পারফরম্যান্স গ্যারান্টি বা সিকিউরিটি মানি দিলেই এনসিটিবি বই ছাপার অনুমতি দিতে সম্মত হয়। এরপর বই মুদ্রণের কার্যাদেশের পাশাপাশি পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়। ওই পাণ্ডুলিপি যাচাই ও এনসিটিবির অনুমোদন নিয়ে বই মুদ্রণ শুরু করতে আরো তিন-চার দিন সময় লেগে যায়। এখনো অনেক প্রেসমালিকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়নি।
তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। তাই দেরিতে দেওয়া হচ্ছে সেটা বলা যাবে না।