লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। চিরন্তন প্রবাদ। বাংলায় এমন একটা প্রবাদ কেন জন্মালো! তবে কি বাঙ্গালী চিরকালই লোভী! অন্য জনপদের মানুষ লোভহীন? না, সব জনপদেই লোভ আছে, লোভী আছে, সবাই লোভী। এই লোভ থেকে জন্ম হয় অসংগতি। যেমন এস এ খালেক, আসলাম, মমতাজরা সাংসদ হয়! হিরো আলমের মত অ-খাদ্য সাংসদ হবার দূঃসাহস দেখায়! যাদের কোন শিক্ষা নাই, সংবিধান কি জানে না, সংসদে কি কাজ হয়, কেন তারা সাংসদ হতে চায় জানে না; তারা জানে সাংসদ মানে অপরিসিম ক্ষমতা!
সাংসদরা আইন প্রনয়ন করবে, প্রশাসনের কাজ করবে সরকার। সংসদের হাতে প্রশাসনের ক্ষমতা নাই, কিন্তু এ দেশে যেহেতু সংসদ সরকার গঠণ করে সেহেতু সংসদ নির্বাহী বিভাগের সর্বচ্চ স্তর দখল করে দেশের কাঠামোটাই নষ্ট করে দিয়েছে। এই নষ্ট পথেই মমতাজ হিরো আলমরা সমাজের কর্তা হওয়ার আস্পর্দা দেখায়।
হীরো আলম হেরে গিয়েছে, রাজনীতি জিতেছে, যেমনটা আশা করা হয়েছিলো তেমনটাই হয়েছে। যদিও সে ৪ নাম্বার হয়েছে তবুও বলেছে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকে তার কথা বিশ্বাস করেছে তাদের অনেকে আবার নিজেকে দেশের প্রথম শ্রেনীর রাজনীতিক মনে করে। কে কি মনে করে সেটা বিবেচ্য না কি হয়েছে সেটাই আসল। যা হয়েছে আজ তা একটা ঘটনা হলেও কাল সেটা হয়ে যাবে ইতিহাস। আর আজ যা হয়েছে তা ইতিহাস মূল্যায়ন করবে, সে দায়িত্ব ইতিহাসের হাতে থাকুক। আমি এই ফল গ্রহন বা প্রত্যাখ্যান করছি না, সেটা আমার বিষয় না। যাদের এ নিয়ে আগ্রহ আছে তারা কথা বলুক। আমার ফোকাস জনগনের উপর, আমি সেখানে থাকি।
এই ইলেকশন দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি, আমি জানি আমরা দেশের জনগন কতটা মূর্খ ও লোভি। অধিকাংশ জনগন জানে না একজন এমপি-র কি কাজ, কি তার কাজ না। তারা জানে কোন পথে হবে তাদের প্রাপ্তি, তাদের লোভের তোড়ে সৎ ও সত্যিকারের যোগ্য মানুষরা ভেসে গিয়েছে ও যাচ্ছে।
এই দেশে এখন আর সৎ, শিক্ষিত ও ভালো মানুষ রাজনীতি করতে পারে না তাই তারা এখন রাজনীতি নিয়ে ভাবে না, অনেকে আবার রাজনীতি নিয়ে ভাবতেও ভয় পায়। দুই একজন যদি এখনো ভেবেও থাকে তারা ইতিমধ্যে রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে নিজের ভাগ্যকে অভিশাপ দিয়ে শান্তি পেতে চেষ্টা করছে। আবার অনেকে পলাতক জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আমাদের দেশে একদল মানুষ আছে তারা সারা দিনে কয় কাপ চা খায় বা একেবারেই খায় কিনা তা নিয়ে কেউ ভাবে না, কিন্তু নির্বাচন এলে ভোট প্রার্থীরা তাদের চা খাওয়াতে হুমড়ি খেয়ে পরে। এই সুযোগে তারা চা খাওয়ার রেট বাড়িয়ে দেয়। তখন কেউ ৫০০ টাকার কমে চা খেতে চায় না। তাদের চা খাওয়াতে হলে সাথে আবার একটা বিস্কুটও দিতে হয়, সেটার দামও যথারিতি আরও ৫০০ টাকা!
গনতন্ত্রটা এভাবেই অল্প টাকায় বিক্রি হয়ে যায় প্রথমিক স্তরেই। চা থেরাপীর কবলে পরে গনতন্ত্র এক সময় গোলকদাধায় পরে হাবুডুবু খেতে খেতে ব্লাকহোলে হারিয়ে যায়। আমরা এখন ব্লাকহোলের পথে আছি। সরকার গনতন্ত্র তালাবদ্ধ করে আর বিরোধিরা তালা ভাঙ্গার সপথ নিয়ে রাস্তায় হইচই করে। এভাবে এক সময় তারাও ক্ষমতায় গিয়ে একই ভাবে তালাবদ্ধ করে গনতন্ত্র আর আজকের সরকার কাল একই ভাবে গনতন্ত্র গনতন্ত্র করে রাস্তায় খাবি খায়, কিন্তু গনতন্ত্র আর মুক্তি পায় না।
যত দিন এই প্রান্তিক মানুষরা ইলেকশন এলে ৫০০ টাকা বা তার বেশি দামের এক কাপ চা পান করা চালিয়ে যাবে তত দিন ব্যবসায়ী ও নষ্ট মানুষদের হাতে রাজনীতি থাকবে। তারাই জনপ্রতিনিধি হয়ে দেশ ধ্বংস করবে ও নিজের ব্যবসা ফুলিয়ে তুলবে। এভাবেই অপরাধে গ্রাস করে নিচ্ছে সমাজ, দেশ ও সামাজিক মূল্যবোধ। এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, পিছিয়ে যাচ্ছে সমাজ ও সামাজিক মূল্যবোধ। এর জন্য সব দায় কি শুধুই রাজনীতির! তাদের কি কোন দায় নাই যারা চায়ের বিনিময় অপরাধ রোপণ করে? আর যারা অপরাধ করে তারা চায়ের বিনিময় অপরাধ করার গ্রিন কার্ডতো কিনেই নিয়েছে, অপরাধতো তারা করবেই।
জনগন ৫০০/১০০০ টাকায় তাদের ভোট বিক্রি করে দিচ্ছে আবার নির্বাচিত প্রতিনিধীর কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে চায়। টাকার বিনিময় জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা জনগনকে কোনরকম সুবিধা দিবে কেন? দিবে না, আর কোনরকম সুবিধা না পেয়ে নিজেদের তারা প্রতারিত মনে করে রাজনীতিবিদদের গালাগাল করবে। এটা দ্বিমূখীতা, যে ভোট সে বিক্রি করেছে সেই ভোটের বিনিময় আবার সুবিধা চাবে সেতো হতে পারে না। যে ভোট কিনেছে সেতো তার ফল অন্যকে দিবে না, এর ফল ভোগ করার জন্যইতো সে ভোটে টাকা ইনভেষ্ট করেছে। তাই বলি টাকা বা ভয়কে না, সৎকে পোষণ করুন অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে।
আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কি চান, রাজনীতিবিদরা সুযোগ নিবেই কারন এটা তাদের পেশা। তারা টাকা ও জীবনের ঝুকি নিয়ে ইলেকশন করে, যদি জিতে যায় এবং তার দল ক্ষমতায় যায় তবেই সে সাকসেস হয় নয়তো পলাতক জীবন বেচে নিতে হয় তার দল ক্ষমতায় না ফেরা পর্যন্ত। এতো ঝুকি নিয়ে যে ফল অর্জন করবে সে ফলতো আপনাকে বা আমাকে দিবে না। আবার অপর দিকে হেরে গেলে যে গঞ্জনা ভোগ করবে আমরাতো তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে যাব না। আবার তার দল ক্ষমতায় না গেলে সরকারের চাপে তাদের জীবনধারণ নরকবাসের সমান হয়ে যায়। অনেকে দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়। এতো ঝুকিপূর্ণ বিনিয়োগ অতি মুনাফার তাড়াতো থাকবেই, তাদের কাছে নিজের উন্নয়ন ছাড়া বাকি উন্নয়নতো গৌণ হবেই! এর পুর দায় তাদের দেয়া যায় না, না চাইলেও চা খাদকদেরও এর দায় বহন করতে হবেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনীতিক ব্যবসায়ী, তারা রাজনীতির থেকে ব্যবসাটা ভলো বোঝে। তাইতো ৫০০ টাকায় এক কাপ চা পান করিয়ে জনগনকে নেশাগ্রস্থ করে নিজেদের কাজটাই করে, বাকি সব বাকিই থাকে। এমন অবস্থায় জনগন সব গেল সব গেল বলে হৈহৈ করে ওঠে, সব যাওয়ার পরে হৈহৈ করে লাভ আছে! তারা যদি ভোটের আগে অতি মূল্লের চা পান থেকে বিরত থাকতো তবে আজ তাদের হতাশ হতে হতো না। এমন চা খাওয়া বন্ধ করে একজন সৎ মানুষকে সংসদে পাঠাতে পারলে দেশের অবস্থা এমন হতো না। তাই সাংসদ না জনসাধারনকে আগে সৎ হতে হবে, দেশ উন্নত করতে চাইলে। এই জন্যই প্রায় ২৫০০ বছর আগেই প্লেটো বলে গিয়েছেন “যে দেশের জনগন যেমন সে দেশ তেমন”। তাই বলি অতিমূল্যের চা-পান বন্ধ করুন।
এক সময়ের বকলম শিরমনি এসএ খালেক দাপুটে সাংসদ ছিলো, এই চা থ্রাপির গুনে! ড. কামাল জামানত হারান আর খালেক বিপুল ভোটে সাংসদ হয়ে দেশ লুটেছে। এটা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য লজ্জার, অথচ আমরা সে লজ্জায় লজ্জিত হইনা। একজন সর্বচ্ছ আইনবিদকে পদ-দলিত করে আর একজন সর্ববিষয় সর্বচ্চ মূর্খ মানুষ হন হন করে সর্বচ্চ আইন পরিশদে প্রবেশ করে আইন প্রনয়ন করে! একটা জাতির জন্য এর থেকে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে!
যে দেশের রাজনীতিকরা সংসদকে শুধু ক্ষমতার কেন্দ্র হিসাবে দেখে সে দেশে সাংসদরা একটা সংখ্যার বাইরে কিছু না। জ্ঞানের দরকার নাই যে সমাজে সে সমাজে জ্ঞানী জন্মায় না বা জ্ঞানীরা থাকে না। বাংলাদেশে এখন জ্ঞান বাদ দিয়ে ক্ষমতা চর্চা হচ্ছে আর এই পথেই মূর্খরা সাংসদ হয়ে বসেছে। এর দায় যেমন আমাদের, মূল্য আমাদেরকেই চুকাতে হবে।
আমাদের এই অদপতনের পথ ধরেই একজন পথ শিল্পী মমতাজ সাংসদ হয়েছে! বকলম হিরো আলমের মত অখাদ্যগুলা সাংসদ হবার আসপর্দা দেখায়! এটা আমাদের চরম দুর্ভাগ্য।
এই সর্বচ্চ মূল্যবোধের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও অনেক রুচিহীন মানুষ হীরো আলমদের পক্ষে কথা বলছে, সরকারকে নানা ভাবে গালাগাল করছে তাকে পরাজিত করার জন্য! এরা কি জানে না সংসদে আইন না জানা অশিক্ষিতদের থাকা উচিত না? সর্বচ্চ আইনবিদদের হাতে সংসদ ছেড়ে দেয় উচিৎ। ওখানে তাদেরই থাকা উচিত। খালেক, মমতাজ, আসলাম ও হিরো আলমদের স্থান সংসদ না।
সংসদ ইলেকশনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা তা করার সর্বনিন্ম যোগ্যতা হওয়া উচিত দেশ ও সংসদের সকল আইন ১০০ ভাগ জানা। আইন জানবে না আর আইনপ্রনেতা হতে চাবে সেটা কিভাবে হয়! যে গাড়ি চালাতে যানে না তাকে যদি ড্রাইভারের কাজ না দেয়া যায় তবে যে আইন যানে না তার জন্য আইনপ্রনেতা হওয়ার পথ খোলা থাকবে কেন, কোন যুক্তিতে? ড্রাইভিং না যেনে গাড়ি চালালে যদি অপরাধ হয় তবে আইন না যেনে আইনপ্রনেতা হওয়া অপরাধ হবে না কেন! এই অপরাধ বন্ধ হোক। সংসদ আইনজ্ঞদের জন্য রিজার্ভ করা থাক।
আর এক ভাবে এর সমাধান হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের মত নির্বাহী ও সংসদ আলাদা করে দেয়া হোক। সংসদ আইন প্রনয়ন করবে আর সরকার আইন প্রয়োগ করবে। দুই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আলাদা ভাবে হবে, দু’টার কাজের ধরণ আলাদা থাকবে। সাংসদ থাকবে সংসদে, সরকার থাকবে সংসদের বাইরে। সে ক্ষেত্রে খালেক, মমতাজদের মন্ত্রী হতে বাধা নাই কিন্তু সাংসদ হতে বাধা থাকবে।
যদি এটা সম্ভব না হয় তবে যেসব যোগ্য মানুষরা অভিমানে রাজনীতি একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন বা ছাড়ার পথে, তাদের ফিরিয়ে এনে সংসদের মান বাচানো হোক। এই অযোগ্যদের হাত থেকে আমরা মুক্তি চাই।