শারীরিক শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা জানি, দেহ ও মনের সম্পর্ক একান্ত ঘনিষ্ঠ। তাই শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ, অপূর্ণাঙ্গ।
শারীরিক শিক্ষা বলতে শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনকে বোঝায়। একজন শিক্ষার্থী নিয়মকানুন মেনে শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলায় ভালো ফল করতে পারে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই সে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের শিক্ষা নেয়। স্নায়ু ও মাংসপেশির সমন্বয় সাধনে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
করে।
শারীরিক কার্যকলাপ স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সব রোগ দূরে রাখে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। উপস্থিত চিন্তাধারার বিকাশ সাধন হয়। সেবা ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়। বিভিন্ন দলের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠে। আনুগত্যবোধ ও
নৈতিকতা বৃদ্ধি পায়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব গড়ে ওঠে। আত্মসংযমী হওয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানে। নেতৃত্বদানের সক্ষমতা এবং সামাজিক গুণাবলি অর্জন করে। সর্বোপরি তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়।
ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান, আমেরিকাসহ প্রায় সব দেশে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। মার্কিন ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্পোর্টস অ্যান্ড ফিজিক্যাল এডুকেশন এবং
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ২০১২ সালের ‘শেপ অব দ্য নেশন রিপোর্টে’ দেখা গেছে– প্রায় ৭৫% রাজ্যে উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়, অর্ধেকেরও বেশি রাজ্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শারীরিক শিক্ষা ক্রেডিটের জন্য অন্যান্য ক্রিয়াকলাকে প্রতিস্থাপন করার অনুমতি দেয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ছয়টি রাজ্যে (ইলিনয়, হাওয়াই, ম্যাসাচুসেটস, মিসিসিপি, নিউইয়র্ক এবং ভারমন্ট) প্রতিটি গ্রেড স্তরে শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।
কিন্তু আমাদের দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘শারীরিক শিক্ষা’ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও উচ্চ
মাধ্যমিক তথা কলেজ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুসারে প্রায় সব কলেজে
একজন ‘শরীরচর্চা শিক্ষক’ কর্মরত থাকলেও পড়ানোর জন্য শারীরিক শিক্ষা বা এ জাতীয় কোনো বিষয়
কিংবা পাঠ্যবই নেই। উপরন্তু কলেজ পর্যায়ে শরীরচর্চা শিক্ষককে অশিক্ষক পদমর্যাদা দেওয়া হয়, যা একজন শিক্ষকের জন্য রীতিমতো অপমান এবং জাতির জন্যও লজ্জাজনক। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি কলেজ মিলে কয়েক হাজার শরীরচর্চা শিক্ষক তাই একান্ত মনের কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে গিয়ে মনীষী সি এ বুচার বলেছেন, ‘শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শারীরিক শিক্ষা হলো সুনির্দিষ্ট শারীরিক কাজকর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা।’ আরেকজন মনীষী জে বি ন্যাশ বলেছেন, ‘শারীরিক শিক্ষা গোটা শিক্ষার এমন একটি দিক, যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহ এবং স্বভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।’ এক কথায়, আজকের শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শারীরিক শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত দরকার।