ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা শাহজাহান ওমর ও তার স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানা তিন কোটি ৮৭ লাখ আট হাজার ৮৬৭ টাকার মালিক। এর মধ্যে শাহজাহান ওমরের চেয়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকা পাঁচ গুণ বেশি। শাহজাহান ওমরের হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় শাহজাহান ওমর জানান, তিনি ও তার স্ত্রী মোট ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ টাকার মালিক। কৃষি জমি, বাড়ি, দোকান ও অন্য উৎস্য থেকে তার বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ টাকা। নিজের নামে নগদ অর্থ আছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা। আর স্ত্রীর নামে আছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা করা টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৩ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ ও এফডিআর এ নিজ নামে ১ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং একই খাতে স্ত্রীর নামে আছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা। তার গাড়ির মূল্য ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ি মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়াও উভয়ের আসবাবপত্রসহ আরও ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ আছে বলে হলফ নামায় উল্লেখ করা হয়। তবে হলফনামায় তার ও তার পরিবারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ও তদন্তনাধীন মামলার কোনো বিবরণ উল্লেখ নেই।
২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ এবং নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৬। এই হিসেবে গত বারের তুলনায় এবার তার সম্পদ ও নগদ অর্থ কম দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। সেই হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার কৃষি, ব্যাংক আমানত ও পেশাগত আয় উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ টাকা। শাহজাহান ওমরের নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭ টাকা। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ছিল ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২১২ টাকা। স্থায়ী আমানত ছিল ২ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৯ হাজার ৮৮১ টাকা। গাড়ীর মূল্য ছিল ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। তাদের উভয়ের ব্যবহৃত স্বর্ণের মূল্য ছিল ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের ইলেকট্রিক ও আসবাবপত্রের মূল্য ছিল ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। উভয়ের কৃষি ও অকৃষি জমির মূল্য ছিল ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ টাকা। বরিশাল ও রাজাপুরে মোট ৩টি বাড়ি ও পাকা ভবনের মূল্য ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০৮ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকায় একটি খামার মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০৮ টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাহজাহান ওমরের চেয়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ প্রায় ৫ গুন বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ও তার স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানত সমপরিমাণ বলে হলফ নামায় উল্লেখ করেন। তবে শাহজাহান ওমরের নামে ১/১১ এর সময় দুদকের করা অবৈধ অর্থসম্পদ উপার্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের গাড়ি পোড়ানো ২টি তদন্তনাধীন মামালার বিষয়ে কোন তথ্য হলফনামায় নেই। যদিও ২০১৮ সনের হলফনামায় রাজাপুর ও ঢাকার ২০০৭ সনের দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রাজপুর থানার দায়ের করা মামলায় আদালতে খালাশ এবং ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের হওয়া অপর মামলায় খালাশের পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহজাহান ওমরের সর্বশেষ মামলার কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
২০১৮ সনের সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে নগদ অর্থে দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। এ হিসেবে গত ৫ বছরে শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রী নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এই টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই। এছাড়াও বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ড সড়কে বীর উত্তম ভবন এবং রূপাতলি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নির্মাণাধীন বীর উত্তম হাসপাতালের কোন তথ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১৮ সনের হলফ নামায় বরিশাল ও নিজ গ্রাম রাজাপুরে তার মোট ৩ টি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।