সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কমানো নিয়ে শিক্ষকদের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই বৈষম্য কমানোর বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সাড়া পাননি শিক্ষকরা। এ কারণে ধীরে ধীরে শিক্ষকদের ক্ষোভ বেড়েছে ।
এ কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা নয়, আরো বড় দাবি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ চান তারা। তাদের দাবি, তাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করতে হবে।
এই দাবি নিয়ে শিক্ষকরা গতকাল শুক্রবার ১১ দিনের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনত শিক্ষকরা বলেন, দাবি আদায় না করে স্কুলে ফিরে যাবো না। তারা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে এসেছেন। ফলে বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামের অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এই কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের অংশগ্রহণও বাড়ছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষক নেতারা। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তবে জাতীয়করণের বিষয়টি যাচাইবাছাইয়ের জন্য দুটি কমিটি গঠনের কথাও জানান। কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারেননি শিক্ষক নেতারা।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ বৈঠক শেষে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আন্দোলনত শিক্ষকদের জানিয়েছেন, ‘তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচ মিনিট সাক্ষাতের সুযোগ চান। এই সুযোগ না দেওয়া হলে তারা রাজপথ ছাড়বেন না।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, একাধিক শিক্ষকদের সঙ্গে। তারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী নই আমরা। কারণ শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল্যায়ন করেননি।
শিক্ষকরা বলেন, সরকারি শিক্ষকরা তাদের মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া পান। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা। এত কম টাকা দিয়ে কী হয় ? এই বাড়ি ভাড়া একটি যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করা দরকার। সেটা ২০ বা ২৫ শতাংশ বা আরো কিছু বেশি হতে পারে। আর সরকারি শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের শতভাগ। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ২০ ভাগ। এই ভাতা এমপিওভুক্তদের ক্ষেত্রেও শতভাগ করা প্রয়োজন। এছাড়া অবসরকালীন সুবিধা আরো বৃদ্ধি ও সহজে পাওয়ার ঘোষণা দিলে সাধারণ শিক্ষকরা আপাতত আশ্বস্ত হবে। আন্দোলেনর মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবে। শূন্য হাতে শিক্ষকদের বাড়ি ফেরানো যাবে না। এসব দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরণ অনশনে যাবেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে শিক্ষকদের নানা আশঙ্কাও রয়েছে। সরকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কিছু সংগঠন কাজ করছে বলে আন্দোলনে থাকা শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন বিষয়টি গবেষণার জন্য কমিটি হবে। এই কমিটিতে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরাও বিশ্বাস করি, সব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে মেগা পরিকল্পনা নিতে হবে। এজন্য সময় লাগবে। কিন্তু আমরা এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা চাই। এজন্য দেখা করতে চাই।
তিনি জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা দেওয়া হয়। আশা করি এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগেও কোনো দাবি পূরণ করবেন, যাতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোনো একটা দাবি পূরণের ঘোষণা দিলেই আমরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে চলে যাবো।