প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন।
মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর এম কোরবান আলী ও সেক্রেটারি এ এফ এম ফজলুল করিম এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে এবং তারা ধর্মীয় শিক্ষাকে মনে-প্রাণে ধারণ করে। তাছাড়া সকল ধর্মেই শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে শৈশবকালই ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের উপযুক্ত সময়। শিশু বয়সেই তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাদ দিয়ে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে চায়। সরকার ধর্মহীন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করে মানুষকে অধার্মিক, অনৈতিক ও পাপাচারে নিমজ্জিত সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে ধর্মহীন শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়। এটা হলো কুশিক্ষা, যা মানুষকে ধীরে ধীরে নৈতিকতা বিবর্জিত অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়। ফলে দেশ সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া, জিনা-ব্যাভিচার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতি ও পাপাচারে ভরে যাবে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে। আমরা সরকারের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তারা বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাদ দেয়া জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি এটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণও বটে। একদিকে সরকার ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে, অপরদিকে নাচ-গান ইত্যাদির মাধ্যমে যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এটা সম্পূর্ণ রূপে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ কথাটি লেখা আছে। এসব বিবেচনায় পাঠ্য বই থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া একবারেই অযৌক্তিক, বৈপরীত্য ও হাস্যকর ব্যাপার।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা না পেলে মানুষ উন্নত নৈতিকতা অর্জন করতে পারে না। মানুষের অন্তরে আল্লাহভীতি তৈরী ব্যতীত তাকে অন্যায় ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই মানুষ আমানতের খিয়ানত করে, মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজা ও টেন্ডারবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ে।
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে এবং তারা উৎপাদনশীল ও দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হবে, যা একটি দেশের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়।
তারা আরো বলেন, ‘সকল ধর্মেই ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়ার জন্য সরকার অত্যন্ত কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীগণ এ বিষয়ে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে পাঠ্য তালিকায় ধর্মীয় শিক্ষা থাকছে না। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, অতি সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তাদের দেয়া এক বিববৃতিতে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন তা জনগণের মাঝে সন্দেহ, সংশয়ের সৃষ্টি করেছে।
আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে কোনো ধরনের গোজামিল বা অপকৌশলের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়া যাবে না। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষাকে পরোক্ষভাবে ধর্মীয় শিক্ষা বলে চালিয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
এ সময় তারা প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সাথে ধর্মবিবর্জিত শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতিও আহ্বান জানান।