শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারি বিধি না মেনে আয়-ব্যয়, যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত, জনবল কাঠামো, বিভিন্ন আদায়-প্রাপ্তিসহ আর্থিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৫০টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র নিরীক্ষা করে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর অনিয়মের এই প্রমাণ পায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরীক্ষায় ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।
অনিয়ম হয়েছে যেভাবে
পরীক্ষা তহবিলের অর্থ থেকে অসৎ উপায়ে ব্যয় করা হয়েছে ১০ কোটি ৯ লাখ তিন হাজার ৬৭৭ টাকা।
উন্নয়নকাজে টেন্ডারপ্রক্রিয়ার আগেই ব্যয় করা হয়েছে তিন কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। সেমিনার তহবিলের জন্য আদায় করা অর্থ নির্দিষ্ট কাজে ব্যয় না করেও এক কোটি ৮০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। ম্যাগাজিন খাতে আদায় করা এক কোটি ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৫ টাকা ম্যাগাজিন প্রকাশ না করে রাখা হয়েছে ব্যাংকে। এই টাকা ব্যাংকে জমা রাখার অর্থ হলো অন্য কোনো খাত দেখিয়ে অন্যায়ভাবে ব্যয় করা। পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী খাতভিত্তিক ক্যাশ বই তৈরি করে পৃথক ব্যাংক হিসাবে দুই কোটি ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৮ টাকা স্থানান্তর করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অনুমোদন ছাড়া মাস্টাররোলে কর্মী নিয়োগ করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে এক কোটি ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ টাকা। কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা করা অর্থ বিভিন্ন তহবিলে স্থানান্তর করা হয়নি এক কোটি ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৭৯১ টাকা।
পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করা শিক্ষকদের সম্মানী বাবদ বাড়তি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ১১৬ টাকা, নিয়ম ভেঙে সম্মানী ২৯ লাখ তিন হাজার ৩৯১ টাকা, ঢাকার বাইরে শিক্ষকদের বিধি ভেঙে বাড়িভাড়া বাবদ ৯২ লাখ সাত হাজার ২৫০ টাকা, শিক্ষক ও কর্মচরীদের সম্মানী, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যেসব ঠিকাদার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে তাদের বিল থেকে আয়কর কাটা হয়নি ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০ টাকা।
ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের না দিয়ে কিংবা কোষাগারে জমা না দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৬ টাকার। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বোর্ড ও কেন্দ্র ফি তাদের ফেরত (কারণ পরীক্ষা হয়নি) না দিয়ে কিংবা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৮০৫ টাকার।
নির্দিষ্ট খাতের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তা অন্য খাতে ব্যয় করে অনিয়ম করা হয়েছে ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। পরিবহন খাতের ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার সাত টাকা অনিয়ম করা হয়েছে। পরীক্ষা তহবিলের ৫ ও ১০ শতাংশ কোষাগারে জমা না দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ১২০ টাকা। টিউশন ফি, ভর্তি বা পুনঃ ভর্তি, টিসি ফি আদায়ের ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪১ টাকা অনিয়ম করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া গাড়ি ক্রয় করে অনিয়ম করা হয়েছে ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারি বিধি মেনে না চলায় এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে।