ডক্টর মোঃ বাহারুল ইসলাম: –
অনেক দেশে ভ্রমন এবং বসবাস করার কারনে (২৫ এরও বেশি দেশ) আমার মনে হয়েছে আমেরিকার বাচ্চারা বেশি স্ক্রিনিং করে (মোবাইল, ট্যাবলেট বা টিভি) যদিও তাদের স্কুল থেকে পিতা-মাতাকে বাসায় স্ক্রিনিং সময় রেস্ট্রিক্টেট করার কথা বলা হয়। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এর জরীপ অনুসারে, আমেরিকার বাচ্চারা গড়ে ৫-৭ ঘন্টা সময় স্ক্রিনিং এর জন্য ব্যয় করে যা ১-২ ঘন্টা মধ্যে থাকার কথা ছিল। এক কথায় এটা ভয়াবহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি শিশু এক বেলা না খেয়ে থাকতে পারলেও মোবাইল ছাড়া এক দণ্ডও থাকতে পারে না।
অধিকাংশ পিতা-মাতা তাদের শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্তি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা না করে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এটাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু মোবাইল ফোনে আসক্তি তাদের শিশুদের জন্য ভয়াবহ হুমকিতে পরিণত হতে পারে, তা তারা উপলব্ধি করতে পারে না বা করে না।
অনেকদিন ধরে আমি গবেষণা বা এনালাইসিস করছিলাম কিভাবে বাচ্চাদের স্ক্রিনিং সময় কমিয়ে বা তাদের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের আসক্তি কমিয়ে ফেলা যায়। বিভিন্ন কারণে অভিভাবকরা শিশুর হাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট তুলে দেন। সেটা হতে পারে তাদের ব্যস্ততার জন্য বা বাচ্চারা তাদের যেন বিরক্ত না করে এই জন্য। সেটা নিয়ে সময় কাটাতে কাটাতে মোবাইল ফোনের ওপর শিশুর আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। বই পড়া বা খেলতে না গিয়ে শিশু স্মার্টফোন নিয়ে বসে থাকে। খাবার সময়ও তার মোবাইল ফোন চায়। অনেক সময় এটা পিতা-মাতাদের জন্য খুব কঠিন একটা কাজ। নিচের কিছু টিপস অনুসরণ করলে বাচ্চাদের স্ক্রিনিং আসক্তি ভালভাবে কমানো সম্ভব।
শিশুদের সামনে মোবাইল ব্যবহার না করাঃ শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখলে সে-ও স্মার্টফোন নিতে আগ্রহ পায়। তাই শিশুর সামনে স্মার্টফোনে চ্যাট করা, গান শোনা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
বাইরে খেলতে পাঠান বা সাথে নিয়ে যান: মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তির বড় কারণ ভিডিও গেম। অনেক শিশুই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই জাতীয় গেম খেলে সময় কাটায়। তার বদলে ওদের মাঠে বা বাড়ির ফাঁকা জায়গায় অন্য কিছু খেলতে বলুন। এমন কিছু খেলার উৎসাহ দিন, যেগুলি শরীরের জন্য ভালো। বাইরে গিয়ে খেললে তাকে উপহার দিন। সেটা হতে পারে শিশুর পছন্দের খাবার। তাতে সে বাইরে যেতে উৎসাহ পাবে এবং স্মার্টফোন থেকে সরে আসবে। প্রয়োজনে আপনিও তার সাথে খেলা করুন যদি অন্য খেলার সাথী না পায়।
বাচ্চাকে বেশি করে সময় দিন: অনেক শিশুই একাকিত্বের কারণে মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাচ্চাকে ১০০% কোয়ালিটি সময় দিন। এই সময় যেন আমরা মোবাইল বা অন্য কাজে জড়িয়ে না পড়ি। ওদের সঙ্গে সময় কাটালে স্ক্রিনিং আসক্তি কমে যাবে।
স্ক্রিনিং সময়সীমা বেঁধে দিন: দিনের কতটা সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে, তা প্রথমেই ঠিক করে দিন। কোন অবস্থাতেই সেই নিয়মের বদল যেন না হয়।
স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বিহীন একটা দিন: সপ্তাহের এমন একটা দিন বেছে নিন, যেদিন স্মার্টফোন ব্যবহার করাই যাবে না। এটি পরিবারের সকলের ছুটির দিন হলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ সেদিন বাড়ির শিশু পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। তাতেও কমবে ফোনের প্রতি নির্ভরশীলতা।
ঘুমের আগে কোনভাবেই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট নয়: ঘুমের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেবেন না। এতে চোখের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। এতে ঘুমও ভালো হয় না। ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন সরিয়ে রাখুন। ধীরে ধীরে আসক্তি কমবে।
অন্য কিছুতে উৎসাহ: ছবি আঁকা বা অন্য কোন একটিভিটিতে কি আপনার বাচ্চার আগ্রহ আছে? তাহলে সেই আগ্রহটাকে আরও বাড়িয়ে দিন। তাতেও কমবে ফোনের আসক্তি।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে দিন: স্মার্টফোনের কোন কোন অ্যাপ আপনার সন্তান বেশি ব্যবহার করে, সেদিকে নজর রাখুন। তার মধ্যে কোন অ্যাপসগুলো ওর কাজের? দেখা যাবে, এমন বহু অ্যাপ রয়েছে, যা ওর কোনও কাজে লাগে না। অথচ সেগুলি নিয়েই সময় কাটায় সবচেয়ে বেশি। সেগুলি দ্রুত ফোন থেকে মুছে ফেলুন। তাতেও ফোনের প্রতি ওর আগ্রহ কমবে।
লেখকঃ
সহযোগী অধ্যাপক, ফ্লোরিডা গলফ কোস্ট ইউনিভার্সিটি