আজ ১৭ মার্চ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিন এবং বাংলাদেশের জাতীয় শিশু দিবস। ১৯৯৭ সাল থেকে আমাদের দেশে শিশুদের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। শিশুদের প্রভাবিত করে এমন সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬৯.১১ মিলিয়ন, যার মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। বিগত কয়েক দশক ধরে শিশু বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও শিশুদের কিছু অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছে।
বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং শিক্ষার সুযোগের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুসারে শিশু মৃত্যুহার হাজারে ২১। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ মিলিয়ন শিশু দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে এবং অনেকেই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বিশুদ্ধ পানির মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো যথাযথ পাচ্ছে না।
বাংলাদেশে শিশুশ্রম একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা, যেখানে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী আনুমানিক ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন শিশু কোনো না কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এই শিশুদের অনেকেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করে। বিশেষ করে কলকারখানা ও যানবাহনে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশের ওপর যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও কলকারখানায় সরকার ও কারখানা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিশু শ্রমিক অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে বের হলে হরহামেশাই দেখা মেলে শিশুরা বাসে, চায়ের দোকানে, মনোহারি দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে, যা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। হালের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাবিব মাহমুদের একটা জনপ্রিয় গানের লিরিক্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলতে চাই, ‘শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে, আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?’ সুতরাং ঘরহীন, অভিভাবকহীন সব শিশু যেন তাদের সব ধরনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পায়—এই বিষয়টাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আইন করে শিশুশ্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে হবে এবং যেসব প্রচলিত আইন আছে, সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
অধিকন্তু, আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের হারও অনেক বেশি, যেখানে প্রায় ৫২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের আগে। বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সেই গর্ভাবস্থা শুরু হতে পারে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে শিশু দিবস শিশুদের সুস্থতার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য এবং দেশের অনেক শিশু যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি অপরিহার্য দিবস। বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবসে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম পালন করা হয়। অনেক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিনটি উদযাপনের জন্য শিল্প ও কারুশিল্প প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যদিও শিশু অধিকার বাস্তবায়নে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, বাংলাদেশের সমস্ত শিশু যাতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পায় এবং শোষণ ও অপব্যবহার থেকে সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য এখনো অনেক কাজ করা বাকি আছে। সরকার, এনজিও এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে। টেকসই উন্নয়ন ও অভিষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিশুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা অপরিহার্য। এবারের শিশু দিবসের অঙ্গীকার হোক সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা।