বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে শুধু বিরোধী দলীয় পুরুষ নেতাকর্মীরাই নয়, নারী নেত্রীরাও সরকারী আক্রোশ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশে শিশু-বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই ভয়ানক ভয়ের পরিবেশের মধ্যে দিন যাপন করছে।
তিনি বলেন, সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণের কারণে যে কেউ মারাত্মক সরকারী জুলুমের মধ্যে পড়তে পারে। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ সেই জুলুমেরই শিকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই বন্দুকের নিশানা হওয়া।
রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।পরে নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদকে আটকের প্রতিবাদ ও তার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মহিলা দল।
আজ রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে ভাসানী ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী অভিযোগ করেন, গতকাল বরিশাল শহরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ লঞ্চে ঢাকা সদরঘাটে পৌঁছার পর গাড়িতে উঠে কিছুদূর অগ্রসর হলে র্যাব-৩ এর একটি টিম এসে গাড়ি আটক করে এবং সবাইকে র্যাবের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সুলতানা আহমেদ এখন র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে। এই ঘটনা শুধু অমানবিকই নয়, একজন সম্মানিত নারী নেত্রীর প্রতি চরম অবমাননা এবং সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত ক্রোধ চরিতার্থ করার বর্ধিত প্রকাশ।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকার জুলুমের নানা ধরণের বৃত্ত রচনা করেছে। সুলতানা আহমেদকে তুলে নিয়ে কোন ‘আয়নাঘরের’ কয়েদখানায় রাখা হয়েছে সেটি আমরা কেউ জানি না। দুঃশাসনের জাল আষ্টেপৃষ্ঠে চারিদিক দিয়ে বেঁধে ফেলা হচ্ছে।
রিজভী আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসতে না পারে সে কারণে গভীর ভয়ের ঘেরাটোপে বাংলাদেশকে বন্দী করে রাখতে চাচ্ছে সরকার। সবাইকে চুপ থাকতে হবে, কেউ যাতে নড়াচড়া করতে না পারে-এটাই সরকারের নীতি। ১৪ বছরের কুশাসনে সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছে নারীরা। সুলতানা আহমেদকে আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর আহবান জানান রিজভী।
এসময় তিনি জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে সুলতানা আহমেদকে আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর আহবান জানান।
মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেত্রী হেলেন জেরিন খান, শাম্মি আখতার, রুমা আক্তার, মিসেস শামীমা রাহিম, শাহীনুর নার্গিসসহ অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদসহ আটক সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবিতে স্লোগান দেন।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি :
আগামীকাল ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
কর্মসূচি মধ্যে রয়েছে –
১) ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সকাল ৬টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২) আগামীকাল (৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
৩) দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বিএনপি’র উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
৪) এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহ স্ব স্ব উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।
৫) ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ইতোমধ্যে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে পোষ্টার পাঠানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
৬) অনুরূপভাবে দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদায় আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির, যুবকদের মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।