বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহ, সংঘাত-হানাহানি বেড়েই চলেছে। ভালো নেই পৃথিবীর কোনো প্রান্তের মানুষ। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি—এ কথা মানতেই হবে। অবকাঠামোগত দিক থেকে তো বটেই, সার্বিক দিক দিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। বিশেষ করে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বিগত দেড় দশকজুড়ে স্বস্তিতে আছে দেশ। প্রতিযোগিতার বিশ্বে বাস করেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কিছু অর্জন করেছি আমরা। বর্তমানে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের যে সুনাম, সুখ্যাতি, তার সব কৃতিত্ব দিতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই।
আজকের ‘জটিল সমীকরণে’র তীব্র প্রতিযোগিতার বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘আলো’ ছড়ানো নিঃসন্দেহে বড় গর্বের, পরমানন্দের বিষয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে বাঙালির স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পেইন্টিং (ছবি) উপহার দেওয়ার দৃশ্য প্রমাণ করে, ‘বাংলা জনপদের আলো’ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘সোনালি ফসল’ ঘরে উঠেছে আমাদের! এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্ব দেখল ‘নতুন চমক’! সম্প্রতি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য অতি ‘অনন্য’। উক্ত রেজুলেশনে জাতিসংঘের সদস্য-রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করে। বলা বাহুল্য, জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবায় সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে সফলভাবে প্রতিফলিত করেছে এই স্বীকৃতি।
উল্লেখ করার বিষয়, এই রেজুলেশনের অনুমোদন ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক। রেজুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রাপ্তিতেও ফেলবে সুদূরপ্রসারি প্রভাব।
মনে থাকার কথা, বাংলাদেশের সকল স্তরের জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই ‘অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ চালু করেছিলেন। সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ‘বিপ্লব’ বয়ে আনে এই প্রকল্প। শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সাড়া জাগানো এই উদ্যোগ সব শ্রেণির মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসা পায়। অপেক্ষা ছিল বিশ্বস্বীকৃতির। শেষ পর্যন্ত খোদ জাতিসংঘের স্তুতি পাওয়া গেল। এই অর্জন দেশের জন্য যে কতটা গর্বের, গৌরবের—দেশপ্রেমিক বাঙালি মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। বলতেই হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে আগামী দিনে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের স্বাস্থ্যসেবায়, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। বদলে দিয়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক চিত্র। বিগত সময়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক উন্নতি ঘটেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনও বলছে একই কথা। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার কমেছে ২৯ শতাংশ। জন্মহার নেমে এসেছে ২ দশমিক ৩-এ। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাতৃগর্ভে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা পাওয়া শিশুর সংখ্যা এখন ৬৪ শতাংশ; কম ওজনের শিশুর জন্মের হার নেমে এসেছে ৩৩ শতাংশে। প্রসবকালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেওয়ার হার ৪২ শতাংশ, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের প্রবণতা ৬২ শতাংশ ও হামের টিকা গ্রহণের প্রবণতা দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশে। ২৩ মাসের মধ্যে সবগুলো মৌলিক টিকা গ্রহণের হার এখন ৮৪ শতাংশ। এসব অগ্রগতিতে দেশে মানুষের গড় আয়ু যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে ঘটেছে জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন।
স্বাধীনতার পর দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। আজকের বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাত এগিয়েছে অনেক দূর। স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ টপকে গেছে ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ আরো বহু দেশকে। এক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের সর্বিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে—এই দাবিকে স্বীকার করতেই হয়।
‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন নিঃসন্দেহে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে এই সেবা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়বে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এবং সত্যিকার অর্থে সেটি হবে আমাদের জন্য আরো বড় অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ‘উদ্ভাবনী মডেল’ বিশ্বব্যাপী আলো ছড়াবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।