করোনাভাইরাসে দেশে আরো ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এদের মৃত্যু হয়। এ সময় শনাক্ত হয় ৬৫৬ জন। শনাক্তের হার ১৩.৭৮ শতাংশ।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১৩.১৮ শতাংশ। ওই ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু এবং ৫২১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
এদিকে করোনার ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরনের দাপটের সঙ্গে সাধারণ সর্দি, জ্বর ও কাশি বা ‘সিজনাল ফ্লু’ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। উপসর্গ একই রকম হওয়ায় সাধারণ সর্দি-জ্বরকেও অনেকে করোনা মনে করে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। আবার করোনায় আক্রান্ত হয়েও অনেকে সাধারণ সর্দি-জ্বর ভেবে উদাসীন থাকছে। হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে চাচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায়ই এ ধরনের পরিস্থিতি।
বাগেরহাটের শরণখোলা হাসপাতালে গতকাল বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া ৭০ জনের মধ্যে অর্ধেক রোগীই ছিল জ্বর, সর্দি ও কাশির। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি চলাকালীন জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত আরো প্রায় অর্ধশত রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস জানান, চার দিনে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল ডা. নাজমুল হুদা গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা আজ এসেছিল এবং করোনা পরীক্ষার জন্য যারা নমুনা দিয়েছে তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত, বাকি ৭৭ শতাংশই সাধারণ সর্দি, জ্বর ও কাশি বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া অনেকে সর্দি, জ্বর, কাশি ও হালকা গলা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এলেও করোনার পরীক্ষা করাতে রাজি হচ্ছে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। ঈদের আগে এক দিনে এ ধরনের ২৫২ জন রোগী এসেছিল। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৯ জন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়। ’
ডা. নাজমুল হুদা আরো বলেন, উপসর্গ থাকার পরও করোনা পরীক্ষা না করানো এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চলার কারণে করোনা এখন বেশি ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সিজনাল ফ্লু এবং করেনার ওমিক্রন ধরনের উপসর্গ প্রায় একই রকম। করোনার ডেল্টা ধরনের উপসর্গ ছিল খুব সিভিয়ার। এখন সেই ধরন নেই। এ কারণে পরীক্ষা ছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে যাদের বয়স ও শরীরের ওজন বেশি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের জটিলতায় যারা ভুগছে তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কারণ ওমিক্রনও তাদের জন্য বিপজ্জনক।
দেশে করোনায় সর্বশেষ মৃতদের সম্পর্কে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৃত ৯ জনের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং পাঁচজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সাতজন এবং চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন করে। মৃত ৯ জনের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের দুজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের তিনজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন।
এর আগে গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তিনজনের মৃত্যু এবং ৯৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায়। ওই সময় শনাক্তের হার ছিল ১৫.৫৯ শতাংশ। গত ১০ জুলাই দুজনের মৃত্যু এবং ৮১৪ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯১ হাজার ৩১। মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ২১২। সর্বশেষ হাসপাতাল ও বাসায় সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৫৪২ জন। এ নিয়ে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৬০ জন সুস্থ হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় চার হাজার ৭৯৯টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয় চার হাজার ৭৬১টি।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগের ৫৭৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ জন, বরিশালে একজন, রাজশাহীতে চারজন, ময়মনসিংহে একজন, রংপুরে ১৫ জন এবং সিলেটে ছয়জন শনাক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া গত ৪ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত করোনায় যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের। এদের মধ্যে টিকা নিয়েছিল ২৫ জন আর ১৩ জন টিকা নেয়নি।