নয়াদিল্লি: সদ্যই কংগ্রেসের সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। বিশ্বস্ত হাতে কংগ্রেসের দায়ভার তুলে ‘হাঁফ’ ছেড়েছেন দু দশকের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি(Sonia Gandhi)। কিন্তু তা কি সত্যি? আদৌ কি নিজের ভূমিকা থেকে সনিয়া ‘অব্যাহতি’ নিয়েছেন? নাকি তলে তলে কংগ্রেসের প্রকৃত ‘নিয়ন্ত্রণ’ রেখেছেন নিজের হাতেই, এ নিয়ে আরও একবার জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে।
সম্প্রতি খড়গে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করার পরেই কংগ্রেসের তরফে ধন্যবাদজ্ঞাপক বিবৃতি জারি করে দাবি করা হয়, মল্লিকার্জুনকে সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়ে ‘আত্মত্যাগ’ করেছেন সনিয়া৷ এই দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার কংগ্রেসেরই অপর একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের সভাপতি পদে আসীন খড়গে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি তার থেকেও বড় সত্যিটা হল খড়গের সভাপতিত্বের প্রথম দিন থেকেই পর্দার আড়ালে বসে আগের মতই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন সনিয়া গান্ধি নিজেই৷ দিন কয়েক আগেই কংগ্রেস সভাপতিকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার তত্ত্ব খারিজ করেছেন স্বয়ং রাহুল গান্ধি৷ একই সুর তুলেছেন মল্লিকার্জুন খড়গেও৷ তারপরেও কংগ্রেস সূত্রের দাবি, সনিয়ার নির্দেশ মেনেই যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছেন নবনির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে৷ এর মধ্যে প্রথমেই থাকছে নতুন স্টিয়ারিং কমিটি গঠন৷
দলীয় সূত্রের দাবি, সনিয়ার নির্দেশ মতই অশোক গেহলত, শশী থারুর এবং সচিন পাইলটকে বাদ দিয়েই ৪৭ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করেছেন মল্লিকার্জুন খড়গে৷ যে তিনজনকে কমিটি থেকে বাদ রাখা হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে নিয়েই সাম্প্রতিক কালে প্রভূত বড় হয়েছিল কংগ্রেস হাইকমান্ডকে৷ রাজস্থানের প্রবীণ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত বনাম সচিন পাইলট দ্বন্দ্বে আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে যায় রাজস্থান কংগ্রেস, আর বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর তো সরাসরি হাইকমান্ড মনোনীত কংগ্রেস সভাপতি পদ প্রার্থী মল্লিকার্জুন খড়গেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন৷ দলীয় সূত্রের দাবি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গড়ে তোলার ঘোষণা করবেন খড়গে, কিছুদিনের মধ্যেই৷ তার আগেই তৈরি হওয়া স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের মনোনয়নেই তিনি দলের নীতি ও অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, সনিয়া গান্ধির নির্দেশেই, দাবি দলীয় সূত্রের৷
এসবের মাঝেই সামনে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷ কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বুধবার মল্লিকার্জুন খড়গে কংগ্রেস সভাপতির চেয়ারে বসার পরেই সনিয়া-রাহুল গান্ধি এবং কে সি ভেণুগোপালের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন৷ এই বৈঠকেই তৈরি হয় প্রাথমিক রোডম্যাপ, যে নির্দেশিকা মেনে এবার সামনে এগোবেন কংগ্রেসের নব নির্বাচিত সভাপতি৷ এই প্রসঙ্গেই কংগ্রেস সূত্রের মাধ্যমে সামনে আসছে খাড়গের রোডম্যাপের কয়েকটি বিন্দু, যেখানে সবার আগে বিভিন্ন রাজ্যের দলীয় সংগঠনের খোলনলচে পরিবর্তন করার কাজে হাত দিতে পারেন নব নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি, দাবি করা হয়েছে দলীয় সূত্রে
৷কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সবই সনিয়া গান্ধিরই মস্তিষ্ক প্রসূত। কারণ, খড়গে-কে দলের ‘ব্যাটনে’র ভার সম্পূর্ণ রূপে দিতে চান না সনিয়া। আড়ালে থেকে ‘মেঘনাদে’র মতই তিনি সব কিছু আগাগোড়া নিয়ন্ত্রণ করছেন ও করবেন-ও। তা ছাড়া সামনেই রয়েছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি স্বরূপ – গুজরাট ও হিমাচলের নির্বাচন যা কিনা সর্ব অর্থেই কংগ্রেসের জন্য অ্যাসিড টেস্টের চাইতে কোনো অংশে কম নয়। তা ছাড়া ২০২৪ এর আগে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংগঠনকেও ঢেলে সাজানোর রয়েছে দায়িত্ব। তা-ই সব দিক বিচার করে সভাপতির ‘পরামর্শ’ দাতা রূপে প্রত্যাশিত ভাবে আড়ালে থেকে কংগ্রেস তথা দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের ‘নিয়ন্ত্রক’ রূপেই কাজ করে চলেছেন সনিয়া গান্ধি৷ অর্থাৎ এত তাড়াতাড়ি তিনি ‘হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন’ বলে মনে করছেন না কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।