আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের স্লোগান ‘গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’। কাউন্সিলে দলীয় যে ঘোষণাপত্র গৃহীত হবে সেটার পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারেও গুরুত্ব পাবে এটি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এর রূপরেখায় কী থাকবে এর বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে। জানা গেছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। এ ধারণায় ই-নথি ব্যবস্থা, স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম, অনলাইন শ্রমশক্তি, ক্যাশলেস সোসাইটি এবং পেপারলেস যোগাযোগব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকেই আওয়ামী লীগ তাদের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তুলে ধরবে।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পাশাপাশি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র ধারণাও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ আমরা চলে যাব। এর জন্য চারটা ভিত্তি ঠিক করা হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, স্মার্ট ইকোনোমি অর্থাৎ ইকোনোমির সমস্ত কার্যক্রম আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে করব ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট যেটা ইতিমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি, বাকিটাও করে ফেলব এবং আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।” গত বছর ২৪ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী স্বপ্ন ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’। আগামী দিনে বাংলাদেশের সব ফিন্যানশিয়াল ট্রানজেকশন ক্যাশলেস হয়ে যাবে, নগদ অর্থে লেনদেন হবে না।”
‘কাউন্সিলে নেত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে’
আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে কমিটিতে বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সভাপতি পদে তিনি (শেখ হাসিনা) অপরিহার্য। তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। এই মতের ভিন্ন একজন কাউন্সিলরও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ১০ জন প্রার্থী আছেন, যারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে নেত্রীর ইচ্ছা, কাউন্সিলরদের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। আমি এই মুহূর্তে কোনো প্রেডিকশনে যেতে পারি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, সেখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা পরবর্তী সম্মেলনে, নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি, সে রকমও চিন্তা-ভাবনা আছে। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আপাতত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না। এবারের কমিটি অ্যাকটিভ, কেউ বাদ পড়বে বলে মনে হয় না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ভেন্যু পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ২০৪১ সাল পর্যন্ত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব জুড়ে সংকট চলছে। এই চ্যালেঞ্জিং টাইমে আমাদের সম্মেলন হবে। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে এ সম্মেলনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সুশৃঙ্খল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ আগামী সরকার পরিচালনার জন্যও প্রস্তুত। এ সময় নিবন্ধিত সব দলকে কাউন্সিলে দাওয়াত দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
নেতাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে!
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র প্রণয়নে তৃণমূল নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাছাই করা ২০টির বেশি প্রস্তাব দলটির এবারের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গঠনতন্ত্রে একজন নেতা কতটি পদে থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে নেতাদের সম্পদের হিসাব প্রদান এবং ঘোষণাপত্রে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ থিমের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাব তিনটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। এছাড়া আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আওয়ামী লীগের প্রতিটি কমিটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণসংযোগবিষয়ক সম্পাদক ও উপকমিটির সম্পাদক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছেন।
রাজধানীমুখী কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। দুপুরে খাবার ও নামাজের বিরতির পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসবে দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। নির্বাচিত করা হবে নতুন নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। বুধবার থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট কার্ড বিতরণ শুরু করে দলটি। আজ শুক্রবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। সেখানে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর ছাপ রয়েছে। ইংরেজি ‘এল’ আকৃতিতে বানানো মঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চার জাতীয় নেতা, সজিব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি থাকছে। প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট থাকবে। এর মধ্যে একটি ভিআইপি গেট, বাকি চারটি কাউন্সিলরদের প্রবেশের জন্য। সকাল ৭টা থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের গেট খুলে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে নবম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় প্রসঙ্গে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।’ কমিটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পাঁচ জন নেতা বলেন, ‘সবাই টেনশনে আছে। অনেকেই অনেক কথা বলে। অমুক হয়ে গেছে, তমুক রয়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়া এখনো কেউ জানে না।’ এদিকে সম্মেলনের আগে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।