অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে যেতে বলেছে দখলদার ইসরায়েল। প্রতিশোধমূলক বোমা বর্ষণের সপ্তম দিনে সময় দেওয়ার পর থেকেই ছিটমহলগুলোতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। বিভ্রান্তির মাঝে এখন নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত সপ্তাহে দক্ষিণ ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এরপর থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে বিধ্বংসী বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এবার ঘনবসতিপূর্ণ উত্তরাঞ্চলে স্থল আক্রমণের আদেশ দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর জবাবে হামাসের শরণার্থী বিষয়ক কর্তৃপক্ষ গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ‘নিজেদের বাড়িতে অবিচল থাকতে এবং দখলদারিত্বের ঘৃণ্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে’ বলেছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, ইসরায়েলের উচ্ছেদের আদেশের পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্য লোকজন তাদের বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছে। এ কারণে স্থানীয় রাস্তাগুলো সব ফাঁকা। শহরজুড়ে বিরাজ করছে নীরবতা। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কোনো গাড়ি নেই।
এদিকে, ইন্টারনেট বিভ্রাট ও ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ায় ফিলিস্তিনিরা তাদের সরে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেনি। তারা জানিয়েছেন, তথ্য খুব কম ছিল এবং বেশিরভাগ লোকই তাদের সরিয়ে নেওয়ার সরাসরি আদেশ শুনতে পায়নি।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বলেন, বাস্তবিক অর্থে প্রায় ১১ লাখ মানুষের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। তারা কীভাবে চলাফেরা করতে পারে? তাদের যথেষ্ট গাধা নেই, পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। সাতদিন ধরে যানবাহন চলাচলের জন্য কোনো জ্বালানি নেই।
আল-কাহলুত বলেন, এই পরিস্থিতি জনগণকে ১৯৪৮ সালের বিপর্যয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে- ফিলিস্তিন থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ ৫০ হাজার আরবের গণপ্রস্থান।
আল-কাহলুত বলেন, গত রাত পর্যন্ত মানুষ পান করার জন্য পানি খুঁজে পাচ্ছিল না। এখন তারা কীভাবে বের হবে এবং কোথায় যাবে তা খুঁজতে?
১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আতঙ্কিত, বিভ্রান্ত। তারা কীভাবে সরে যাবে, কীভাবে যাবে, তার কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা বুঝতে পারছে না কী করতে হবে। আল-কাহলুত বলেন, এখন আমার সন্তানরা আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমরা কোথায় যাব? আমি বললাম, আমি জানি না।
গাজা সিটিতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তা ইনাস হামদান সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি ‘বিশৃঙ্খল’। কেউ বুঝতে পারছে না কী করতে হবে।
গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বলেন, খাবারের কথা ভুলে যান! বিদ্যুতের কথা ভুলে যান! জ্বালানির কথা ভুলে যান! এখন একমাত্র উদ্বেগ হচ্ছে, আপনি যদি বাঁচতে চান পালাতে পারবেন কিনা! জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কী হবে?
লেবাননে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত ইয়ান পারমিটার বলেন, ইসরায়েল সতর্ক করে দিচ্ছে যে, তারা প্রবেশ করছে।
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের নিজেদের ‘নিরাপত্তার’ জন্য এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘আরেকটি ঘোষণা দেওয়ার পরেই কেবল আপনি গাজা সিটিতে ফিরে আসতে পারবেন।’
তবে হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যুরোর প্রধান বাসেম নাইম বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কাছে দুটি বিকল্প ছিল। এই দখলদারিত্বকে পরাজিত করা, অথবা আমাদের ঘরেই মারা যাওয়া। আমরা চলে যাচ্ছি না। আমরা আর নাকবার (১৯৪৮ সালে সংঘটিত ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি আরবদের দেশত্যাগকে বোঝানো হয়) পুনরাবৃত্তি করতে প্রস্তুত নই।’