মনসুর আলম খোকন
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনার সাঁথিয়ায় অসাধু প্রভাবশালীরা বিলে মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪/৫ শ’ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় শত শত কৃষকের পাকা আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় কাটতে হচ্ছে। বিলগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় নস্ট হচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান, ব্যাহত হচ্ছে পিয়াজসহ রবি শস্যের আবাদ।
কৃষকেদের অভিযোগ, এ মাঠে পেঁয়াজের আবাদ করে প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ পিয়াজ উৎপন্ন হতো, সেখানে কয়েক বছর অসাধু লোকজন মাছ শিকারের নামে বিলে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে আবাদী জমিকে অনাবাদী করে রেখেছে। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের বছরের পর বছর। এ লোকসান থেকে পরিত্রাণ পেতে বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়ে এলাকার কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন মাঠ ঘুরে জানা গেছে, পাবনার পেঁয়াজখ্যাত সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের বাউশগাড়ী, রুপসি, বারোয়ানী, লক্ষিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের ছোট দোবিলা, বড় দোবিলা ও মাদনাইসহ তিনটি বিল রয়েছে। এসব বিলের পানি একটি জোলা (ছোট ক্যানাল) দিয়ে বের হয়ে যেতো নদীতে। কিন্তু গত ৪/৫ বছর এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি নামমাত্র লিজ নিয়ে জোর করে বিলের পানি প্রবাহের রাস্তায় মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। এতে ফসলের মাঠে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ফলে পানির মধ্যে থেকেই কৃষককে আমন ধান কাটতে হচ্ছে। এখনও অনেকের ধান জমিতেই পড়ে রয়েছে কৃষিশ্রমিকের অভাবে।
একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে ধান, অন্যদিকে পানির মধ্যে ধান কাটতে মুজুরি দিতে হচ্ছেও বেশি। গুণতে হচ্ছে লোকসান। কৃষকেরা জানান, কয়েকদিনের মধ্যে আগাম জাতের পিয়াজের চারা বপণ শুরু হবে, অথচ এখনো পর্যন্ত পানি নিস্কাশন না হওয়ায় চিন্তিত তারা। কারণ, তাদের শত শত বিঘা জমি পেঁয়াজের ও রবি শস্যের আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাউশগাড়ী গ্রামের কৃষক ও প্রবীণ আ’লীগ নেতা আব্দুর রশিদ খান বলেন, একটি অসাধু চক্র লীজ নিয়ে বিলের পানি প্রবাহের রাস্তায় মাটির বাঁধ তৈরি করায় তিনটি বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্ট হয়েছে। ফলে বিলের পানি নিস্কাশন না হওয়ায় শত শত বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার কৃষকেরা। যেখানে প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০মণ পিয়াজ উৎপন্ন হতো সেখানে আজ ৪/৫ বছর আমরা আবাদ থেকে বঞ্চিত। তিনি বলেন, এই মাঠে আমার এক দাগেই আছে সতেরো বিঘা জমি। জলাবদ্ধতার কারণে আবাদও করতে পারি না আবার কেউ লীজও নেয় না। এক বছর পিয়াজ বপন করে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল। কারণ বাধ দেয়ার ফলে বৃষ্টির পানিও বের হতে পারে না। বৃষ্টির পানির মধ্যে পিয়াজ পানিতে কুড়াতে হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হওয়ায় আমন ধান কেটে নেয়ার পর অনেক জমি পতিতই পড়ে থাকে।
লক্ষিপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে এক ইঞ্চি জায়গা খালি না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন সেখানে বাঁধ দেয়ার ফলে শত শত বিঘা জমি অনাবাদী পড়ে থাকে জলাবদ্ধতায়।
এ বিষয়ে ধুলাউড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জরিফ আহমেদ বলেন, কেউ যদি বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে সেক্ষেত্রে কৃষকের পিয়াজ, রশুনসহ অন্যান্য রবি শস্য আবাদ ব্যাহত হয়। বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। তবে এরকম কেউ করে থাকলে অবশ্যই বাঁধ অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা খুব দ্রুত সরেজমিন ভিজিট করে কি করণীয় সেই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন যারা আছেন তাঁদের সহায়তা নিয়ে বাঁধ অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।