দেশের ক্রিকেটের তিন মহারথী এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ময়দানে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান। এই তিন মহারথী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনি বৈতরণী পার হলে শুরু হবে নতুন ভাবনা। কে কোন চেয়ারে বসবেন, তা নিয়ে দেনদরবার, দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে। নির্বাচিত হওয়ার আগেই কে হতে পারে বিসিবির সভাপতি, তা নিয়ে এবার খোদ বিসিবির সভাপতির টেবিলেই কথা উঠল।
পাপনের টেবিলে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্ন—মাশরাফি ও সাকিব, দুজনের মধ্যে কে হতে পারেন? মাশরাফি না সাকিব, কে বিসিবিকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন? এই কথায় পাপন পিছু হটলেন। কাউকে সমর্থন দিলেন না। কে বিসিবির সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পারেন, সেটি নিয়ে এখনই কোনো কথা বলতে রাজি না। এই দুজন পাশ করলেই কি তারা বিসিবির সভাপতি পদের জন্য চলে আসবেন, সেটাই-বা কীভাবে নিশ্চিত। কেউ স্বপ্ন দেখতেই পারেন। তবে স্বপ্ন হতে অনেক দূর পাড়ি দিতে হয়। পাপন সেসব দিকে না গিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো সময় আসেনি। পাপন নিজে নির্বাচন করছেন এবং এখন তিনি বিসিবির সভাপতি। এই সময়ে এসব নিয়ে কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চান না। তাছাড়া বিসিবিতে তিনিও থাকতে চান না সেকথা আরো আগেও প্রকাশ করেছেন। তবে সেটিই শেষ পর্যন্ত থাকবে, সেটাও নিশ্চিত না। বিসিবি ও বাফুফে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটা পছন্দ কাজ করে। সেই পর্যায়ে এখনও কিছুই জানা যায়নি। তাই হয়ত পাপন এসব বিষয়ে কথা বলে জল ঘোলা করার পক্ষে না। সাকিব ও মাশরাফি দুজনেই নির্বাচনে ব্যস্ত। তাদের সম্পর্কে বিসিবি ইস্যুতে আগাম কথা না বলে ডিপ্লোমেটিক জবাব দিয়ে পাপন বলেছেন, ‘বলা মুশকিল, এটা বলা মুশকিল, এটা বলা কঠিন, এটা এত সহজ না। এ বিষয়ে এখন বলাটা আসলেই কঠিন। এটা এখানে বলা ঠিক হবে না।’
বিসিবির নেতৃত্ব নিয়ে পাপন কথা না বললেও সাকিবের বিষয়ে বললেন, ‘আমি দেখেছি, সাকিব ওখানে (মাগুরায়) নামার পর থেকে ওকে দেখার জন্য মানুষ পাগল হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে সাকিবের কথা হয়েছে, মাশরাফির সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমার ধারণা, মানুষজন ওকে (সাকিবকে) প্রায় সবাই ভোট দেবে এরকম অবস্থা।’ পাপন বলেন, ‘সাকিবের তো একটা আলাদা প্লাস পয়েন্ট আছে। একটা হচ্ছে দলের ভোট, এটা নৌকা মার্কা। আরেকটা হচ্ছে নিরপেক্ষ ভোট। আমার ধারণা নিরপেক্ষ ভোটগুলো সাকিবের জন্য একটা বিরাট প্লাস পয়েন্ট। আর ওকে সামনাসামনি দেখতে পাওয়া, ওকে ভোট দেওয়া। আমার ধারণা, যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না, তারাও সাকিবকে ভোট দিতে যাবে।’
পাপনের রাজনৈতিক এলাকা ভৈরব, কুলিয়ারচরে গণসংযোগ শেষ করেছেন। এখন জনসভা করছেন। ঢাকা থেকে সংবাদ মাধ্যম গিয়েছে পাপনের এলাকায়। পাপনের বাসার উঠানে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এমপি হওয়ার পর সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কী হবে? পাপন বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে আমার যে কথা হয়েছে, ও খেলবে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত খেলার কথা, তো এটাই জানি। আমার মনে হয় সাকিব খেলবে।’ পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, মা আইভি রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে গেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বোমা হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান আইভি রহমান। তারপরই রাজনীতিতে আসেন পাপন। এবার নিয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো জাতীয় নির্বাচন করছেন পাপন। ‘আমি জীবনে কখনো চিন্তাও করিনি যে, আমি রাজনীতিতে আসব। এটা হলো সত্য কথা, আসলে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি সব সময় ভাবতাম, আমি কখনোই আসব না। আরেকটা জিনিস মনে হতো, রাজনীতিটা অনেক সহজ। তবে আসার পর বুঝলাম এটা অনেক কঠিন, এটার সঙ্গে কিছুর তুলনাই করা যায় না—বললেন বিসিবি সভাপতি।
ভৈরবে নিজের সমর্থন সম্পর্কে পাপনের কথা, ‘ভৈরবে আমি যেই ভোট পাই, তার ৭০ ভাগ নৌকার ভোট। এটা বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও নৌকা। আমার কিছু না। বাকি ২০ শতাংশ ভোট আমার আব্বা-আম্মার জন্য পাই। আমার জন্য শুধু ১০ শতাংশ। এটা হয়তো ক্রিকেটের জন্য। তরুণ প্রজন্মের যেসব ভোট পাই, সেটা ক্রিকেটের জন্য। এইখানে আমার কৃতিত্ব রয়েছে, তা আমি বলব না।’