গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন। হাতে ওজন মাপার যন্ত্র, উচ্চতা মাপার স্কেল বা ফিতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট) নিয়ে একদল খুদে চিকিৎসক ছুটছে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে। তাদের মধ্যে কেউ নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ ওজন মাপছে, কেউ মাপছে উচ্চতা আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছে।
এমনই দৃশ্য দেখা গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ১৫ সদস্যের ‘খুদে ডাক্তার’-এর দলটি সহপাঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রতিবছর দুইবার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে এর তথ্য শিক্ষকদের কাছে জমা দেয় তারা। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো ও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয় তারা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘যখন সাদা পোশাক গায়ে দিই তখন নিজেদের ডাক্তারের মতো মনে হয়। আমরা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সহপাঠী ও অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিই। আমরা কেউ ওজন মাপি আবার কেউ উচ্চতা মাপি। আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কি না দেখি। সেসব খাতায় লিখে অধ্যক্ষ স্যারের কাছে জমা দিই।’
জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ২০১১ সালে সারা দেশে বিদ্যালয়গুলোতে চালু করা হয় খুদে ডাক্তার কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সহপাঠী ও অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেয় এসব খুদে ডাক্তার। প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯১৬ এবং ছাত্রী এক হাজার ১৪ জন। প্লে শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুদে ডাক্তারের দল গঠন করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে যারা বড়, চটপটে এবং বাকপটু শিক্ষার্থী, তাদের খুদে ডাক্তার বানাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একজন করে ডাকা হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েল বলেন, খুদে ডাক্তারের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুরা ভবিষ্যতে বড় হয়ে ডাক্তার হবে এবং মানুষের সেবা দিতে উৎসাহী হবে। ছোট থেকেই তাদের সে মানসিকতার উন্নয়ন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝা যায়, শিশু- কিশোর শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বাড়ছে কি না বা ওজন ঠিক আছে কি না। সেই হিসেবে আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি।’