গুনে গুনে ২০ বছর হলো আজ। ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে ট্রফি জয় করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম বার সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। শিরোপা উৎসবের সেই বাংলাদেশ এই জানুয়ারিতে ২০ বছর পূর্ণ করল। সেদিন উপমহাদেশের ফুটবলে কি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেন বাংলার ফুটবলার আমিনুল, বিপ্লব, রজনী, নজরুল, টিটু, সুজন, হাসান আল মামুন, হাসান, পারভেজ বাবু, আরিফ খান জয়, আরমান, মতিউর মুন্না, মনোয়ার, কাঞ্চন, আলফাজরা। উপমহাদেশের ফুটবল দর্শক বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে চোখ রেখেছিল। ফুটবল নিয়ে দেশের মানুষদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। ২০০৫ সালে শেষবার ফাইনাল খেলেছিল। ফুটবলের সোনাঝরা সেই দিনগুলো আজ নীরবে কাঁদে। এখন ন্যাশনাল টিমস ম্যানেজম্যান্ট কমিটি বলে তারা সাফ নিয়ে ভাবছে। সাফে কীভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছে। গতকাল ন্যাশনাল টিমস কমিটির সভা শেষে কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ বললেন, ‘আমাদের সবসময় থাকে সাফ কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা। সাফে ভালো করার জন্যই চিন্তা-ভাবনার কথাগুলো হয়েছে।’
একটা ফুটবল দেশ ২০ বছর আগে যে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই দেশটা ২০ বছর পর আরো বড় কোনো টুর্নামেন্টে ট্রফি জয়ের কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক। ২০ বছর পর সেই পুরোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলা তো দূরের কথা, বলা হচ্ছে সাফে কীভাবে ভালো করা যায়। ২০০৩ সালে প্রথম বার সাফে খেলতে এলো সাফের নতুন সদস্য আফগানিস্তান। গ্রুপের তিন ম্যাচ হেরে বিদায় নিল। ১০ বছর পর, ২০১৩ সালে নেপালে সাফে খেলতে গিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন হলো। পরদিনই তারা ঘোষণা দিল সাফে আর খেলবে না। তারা আরো ওপরের টুর্নামেন্টে খেলবে। শক্তিশালী দেশগুলোর বিপক্ষে খেলার কথা বললেও তাদেরকে আবার সাফে আনা হয়েছিল। পরে সেই আফগানিস্তান বাংলাদেশকে বলে কয়ে হারিয়েছে। আর বাংলাদেশের ন্যাশনাল টিমস কমিটি এখনো বলছে সাফে ভালো করতে চায়। অন্যদিকে ভারত তো এখন সাফকে পাত্তাই দেয় না। ভারতের চোখে সাফ কোনো টুর্নামেন্টই না। তার পরও ভারতই হেসেখেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় এক যুগ ন্যাশনাল টিমস কমিটির মুঠোয় দেশের জাতীয় ফুটবল দল। বার বার সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিচ্ছে বাংলাদেশ। সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কোনো জবাবদিহিতা নেই ন্যাশনাল টিমস কমিটির কাছে। এক সময়ের চ্যাম্পিয়ন দলকে গ্রুপ পর্ব হতে লজ্জার বিদায় দেখে উপমহাদেশের ফুটবল দেশগুলো থেকে প্রশ্ন উঠত কেন বার বার এই ব্যর্থতা, ন্যাশনাল টিমস কমিটি কী ভাবছে। কমিটির কর্তাদের কণ্ঠেও বছর জুড়ে সেই একই কথা—উন্নতি হচ্ছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা পরিকল্পনা করছি।’ আগামী জুন জুলাইয়ে আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি চ্যাম্পিয়ন হতে চায় কি না।
স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরাকে আরো এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই কথাটা আরো এক সপ্তাহ আগেই জানানো হয়েছিল। গতকাল কাজী নাবিল তার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে কোচের সঙ্গে সভা করলেন, সেখানে কোচ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন। বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, বাফুফের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
জাতীয় ফুটবল দলের পারফরম্যান্স মুখ দেখানোর মতো না। কমিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা যদি এখনো বলেন প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন কি আর এসব কথা দেশের মানুষ শুনতে চায়। দেশের মানুষ শুনতে চাইল কি চাইল না, তাতে ন্যাশনাল টিমস কমিটিরই বা কী আসে যায়। সামনে মার্চে ফিফা উইনডো রয়েছে সেখানে প্রীতি ম্যাচ খেলা হবে। নাবিল চাইছেন খেলাগুলো যেন দেশেই হয়।