দীর্ঘ একটা সময় স্কুল ও কলেজজীবন শেষ করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করি। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ আসার সুবাদে নানান মতের মানুষের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। সুযোগ হয় একে অপরের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে জানার এবং জানতে পারি তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে। প্রতিদিনকার ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষা বাদ দিয়ে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, নতুন বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমরা আড্ডায় মেতে উঠি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি এর বাইরে আমাদের অনেক জ্ঞানার্জন করা দরকার, বইয়ের পাতার বাইরেও? আমাদের আত্মোন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে রাজনৈতিক মতবাদে বিশেষ করে দুই ধরনের সংগঠন আমরা দেখে থাকি। একটি সামাজিক সংগঠন, অন্যটি আত্মোন্নয়নমূলক সংগঠন। সংগঠনগুলোর কার্যক্রম একই রকম হলে সামাজিক সংগঠনগুলো স্বেচ্ছায় সেবা প্রদান বেশি করে থাকে। অন্য সংগঠনটির মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন করব এসব সংগঠন? কী শেখায় তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা বিভিন্ন ভাইভা বোর্ডের সম্মুখীন হই, প্রেজেন্টেশন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কি, একজন শিক্ষার্থী কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন, ভাইভা বোর্ডের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ দক্ষতা অর্জন এক দিনে হয়নি। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুবাদে নিজেকে যেমন তাদের সামনে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তাদের থেকে শিখেছেন যেগুলা নিজের প্রয়োজন বা অজানায় থেকে গিয়েছিল। অন্য দিকে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একজন অন্যজনের সঙ্গে কত সুন্দরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। একটি সংগঠনের ভেতর আপনি যেমন সাংগঠনিক আলাপ শিখবেন, কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা শিখবেন, কীভাবে কাজ সম্পাদনা করতে হয়, তা শিখবেন, ঠিক তেমনই কীভাবে একটি কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা করতে হয়, তা শিখবেন। এবং বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। পাশাপাশি নেতৃত্বদানের গুণাবলি অর্জন করবেন। যে গুণাবলি দ্বারা একটা সময় পর দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। এছাড়া সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন করে থাকে। নিজেদের ভেতর বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আলোচনাসভা, সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা সমস্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। অন্য দিকে, শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রতি আকৃষ্ট করে থাকে এসব সংগঠন। যাতে করে নিত্যনতুন জিনিস উদ্ভাবনের রূপরেখা তারা গড়ে তুলতে পারে। দেশ ও দশের সমৃদ্ধি বয়ে আনতে সচেষ্ট হতে পারে। আবার দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নেশায় ডুবছে, মাদকাসক্ত হচ্ছে। মাদকাসক্ত যেমন দেহের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় চরম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। মাদকের কবলে অচিরেই নিভে যাচ্ছে প্রাণ। তাই মানসিক হতাশার থেকে শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে আসতে হবে, বেরিয়ে আসতে হবে মাদকাসক্তি থেকে। বিভিন্ন কাজের মধ্যে সংগঠনে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে নেতিবাচক দিকগুলো থেকে যেমন নিজেকে দূরে রাখা যাবে, তেমনই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুষ্ঠু মাধ্যম পাবেন এবং নিজেকে সেই চর্চায় নিয়োজিত করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। সংগঠনগুলো একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। একে অপরের খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজন তার পাশে থেকে সহযোগিতার হাত সর্বদা এগিয়ে দিয়ে থাকে। সর্বোপরি, সংগঠন মূলত আপনাকে শেখায় কীভাবে নিজেকে ভবিষ্যতে দেশ ও দশের কাজে নিয়োজিত করবেন। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন। তাই এসব সামাজিক ও আত্মোন্নয়নমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরুত্ব অত্যধিক।