দুর্গাপূজাতে টানা সাত দিন আমদানি বন্ধ থাকা, ভারতে মূল্য বৃদ্ধি ও চাহিদা মতো পেঁয়াজের এলসি খুলতে না পারার প্রভাব পড়েছে বাজারে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
দিনাজপুর অফিস: দুই দিনের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ৪০-৪৫ টাকা। দুই দিন আগে যে পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯৫-১০০ টাকা দরে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ হারুন জানান, ভারতের রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। গত কয়েক দিন ধরেই ভারতের মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধমুখী। ২৫ রুপি কেজি দরের পেঁয়াজ এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ রুপি কেজি দরে। এতে সবমিলিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ৮৮ টাকা। তিনি জানান, আমরা যে এলসি দিয়েছি সেগুলো বর্তমানে বাতিল করতে হচ্ছে। নতুন করে এলসি করার পরিকল্পনা করছি। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে নতুন এলসি খুলছে না। ব্যাংকগুলো যদি এলসি না দেয় বা সরকার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা না দেয়, তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। আর ব্যাংকগুলো যদি আমদানিকারকদের নতুন করে এলসি দেয়, তাহলে শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হবে।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকূপায় প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ছোট মৌকুড়ি গ্রামের চাষি মুক্তার হোসেন বলেন, শনিবার ৩৫ কেজি পেঁয়াজ ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলেন। মঙ্গলবার একই পেঁয়াজ ৪ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলি বলেন, এখনো প্রায় দেড় হাজার টন পেঁয়াজ শৈলকূপার চাষি ও ব্যবসায়ীদের হাতে মজুত আছে।
সিরাজগঞ্জ: স্থানীয় হাটবাজারে ৯০ টাকা কেজি দরের বার্মার পেঁয়াজে ১০০ টাকা ও ১২০ টাকার দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন ও ভোক্তা অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মো. হাসান আল মারুফ বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো ব্যবসায়ীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী): উপজেলায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আলু ৩০-৩৫ ও পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭০ ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। রিক্তা পারভীন নামের এক ক্রেতা বলেন, মাত্র তিন দিন আগেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকায়। আজ সেই পেঁয়াজ কিনতে হলো ১৩০ টাকায়। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, খুব শিগগিরই বাজার তদারকি করা হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর): এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিরিরবন্দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। মঙ্গলবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকা দরে। উপজেলার ভূষিরবন্দর হাটের কাঁচামাল বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, দাম কীভাবে বাড়ছে আমরাও বুঝতে পারছি না। আজ যে দামে বিক্রি করছি, পরদিন সে দামে পাইকারি কিনতে হচ্ছে।
সুজানগর (পাবনা): ১০/১২দিন আগেও উপজেলার অধিকাংশ হাটবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। মঙ্গলবার খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা দরে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শেষে হাট-বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম হয়। সে কারণে দাম বাড়ে। তাছাড়া দেশে ভারতীয় পেয়াজের আমদানি আগের চেয়ে অনেক কম। ফলে দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।