দেশে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ। মহামারির মতো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা। অর্থনৈতিক অশান্তির কারণে ভাঙন ধরেছে অনেক সংসারে। স্বার্থের সংঘাত, অর্থের অভাব, পর নারীতে আসক্ত ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, যৌতুক, মতের অমিল আর আত্মসম্মান মোকাবিলায় চূড়ান্ত হচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ। অনেকে হুটহাট করে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এক জরিপে দেখা গেছে—বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩৭টি বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে, সে হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা। তবে এটা কেবল শহরের হিসাব। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই প্রায় ৯৩ হাজার ডিভোর্সের আবেদন জমা পড়েছে। এই বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব কাদের ওপর সবচেয়ে বেশি?
বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশুদের ওপরে। বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা। এমন পরিবারের সন্তানেরা বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। বিচ্ছেদের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশু, নবজাতক থেকে টিনএজার, সবার বেড়ে ওঠার ওপর নানাবিষয় প্রভাব রাখে। তাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে না, পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যায়, পড়াশোনা নষ্ট হয়, আবেগ ও মানসিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে সমগ্র পরিবারের জন্য আবেগগত অশান্তি সৃষ্টি করে। বাচ্চাদের জন্য পরিস্থিতি খুব ভীতিকর, বিভ্রান্তিকর এবং হতাশাজনক হতে পারে। সন্তানদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিচ্ছেদের ফলে সন্তানদের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দেয়, তারা চিন্তা করে আমার বাবা-মা কেউই নেই, আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যার কারণে তারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। সেই সঙ্গে শিক্ষার ব্যয়ও বহন করতে পারে না। ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যায়।
অনেক সন্তান মা-বাবার বিচ্ছেদ সহজে মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় পড়ে। তারা নিজেকে অপরাধী মনে করে। যে পরিবারের বাবা-মায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকে না, সেই পরিবারের সন্তানরা একটি অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করে।
আমরা স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যকে বুঝি। কিন্তু যখন মা-বাবার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তখন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। সন্তানরা লালিতপালিত হয় পরিবারে। কিন্তু পরিবার যখন ভেঙে যায়, তখন সন্তানরা বিপাকে পড়ে। ফলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের অনীহা চলে আসে। তাদের আচরণের মধ্যেও পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অনেকে খারাপ আচরণ কিংবা অপরাধপ্রবণ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। কারণ তাদের গাইড করার মতো কেউ থাকে না।
আপনজনের মানসিক নৈকট্য বা শারীরিক স্পর্শ শিশুর জন্য খুব দরকার। এর ওপর নির্ভর করবে শিশুদের বড় হওয়া এবং অন্য ব্যক্তি ও সমাজের প্রতি শিশুর মধ্যে কতটুকু আকর্ষণ গড়ে উঠবে সেটা। বিবাহবিচ্ছেদ একটা সুন্দর পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। বাবা-মাকে ভাবতে হবে যে, বিচ্ছেদ হলে শুধু তাদেরই ক্ষতি হয় না, সেই সঙ্গে তাদের সন্তানরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিবাহবিচ্ছেদ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিবাহবিচ্ছেদ এড়াতে নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে।