টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ পর্যন্ত সাত বার দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন টাইগাররা। তবে জয়ের মুখ দেখেননি একটিতেও। মুখোমুখি লড়াইয়ে নিজেদের মাঠে দুই বার, দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে চার বার এবং নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এক বার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে গতকাল দুই দলই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড সংলগ্ন নেটে অনুশীলন করেছে। সকালে টাইগারদের ঘণ্টা তিনেক নেট প্র্যাকটিসের পর একই মাঠে ঘাম ঝরিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকানরা। সেমিফাইনালের অভিযাত্রায় দুই দলের জন্যই আজকের ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। যারা জিতবে, সেমির রেসে এগিয়ে যাবে তারাই, এমন এক চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামবে দুই দল।
আজকের ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জয়ের জন্যই তারা মাঠে নামবেন। দুই দলের জন্যই এই ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ মানসিকভাবে যতটা দৃঢ় অবস্থানে আছে, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পরিত্যক্ত ম্যাচে এক পয়েন্ট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিক ততটাই চাপের মধ্যে আছে বলে মনে করেন টাইগার অধিনায়ক। আর বাংলাদেশ এই সুযোগটাই কাজে লাগাবে বলে আশাবাদী সাকিব।
সিডনিতে টানটান উত্তেজনায় ভরা এক ক্রিকেট যুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ইতিমধ্যে এই ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অবশ্য এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আজ ভারত ও নেদারল্যান্ডসের খেলাটিও হবে একই মাঠে যা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ১টায়। এই ম্যাচ সামনে রেখে সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মধ্যে উত্সবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সিডনি ম্যাচের আগে শুধু ঘাম ঝরানো অনুশীলন নয়, মনোবল চাঙ্গা করার জন্য শহর দর্শনেও বের হয়েছিল টাইগাররা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যাটা সিডনির বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র হারবার ব্রিজ ও অপেরা হাউজে কাটিয়েছেন লিটন, মোসাদ্দেক, আফিফ ও ইয়াসির।
বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে অনলাইনে আগেভাগে টিকিট করে রেখেছিলেন প্রবাসীরা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে তারা সিডনিতে ইতিমধ্যে জড়ো হতে শুরু করেছেন। বিশ্বকাপ দেখতে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ড থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসা লুত্ফুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানালেন, তিনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পাঁচটি ম্যাচের টিকিট আগেই অনলাইনে কিনে রেখেছেন। তার স্ত্রী অবশ্য হোবার্টে বাংলাদেশের জয়ের ম্যাচটি দেখতে পারেননি। সেই আক্ষেপ ঘোচাতে তিনি সিডনির ম্যাচটি দেখতে ভুলবেন না।
অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি (২৮১টি) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে এই সিডনিতে। স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৪৮ হাজার। ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে মেলবোর্ন, পার্থ কিংবা অ্যাডিলেডের চেয়ে কম হলেও বাউন্ডারির আয়তনে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় মাঠ। ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যানের স্টাম্প থেকে সরাসরি বাউন্ডারির দূরত্ব ৬৪ মিটার এবং স্কয়ার পজিশনে ৫৯.৩৩ মিটার হলেই আইসিসির নিয়ম রক্ষা হয়। কিন্তু আইসিসির বেঁধে দেওয়া পরিমাপের চেয়ে অনেক বড় মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, যার স্ট্রেইট বাউন্ডারির দূরত্ব ৯৩.৭২ মিটার, মিড উইকেটে বাউন্ডারির দূরত্ব ৭৪ মিটার এবং স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির দূরত্ব ৬৮ মিটার।
সিডনিতে একই দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচ থাকায় মাঠের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোরে দুই দেশের জার্সি ও পতাকা বিক্রির হিড়িক পড়েছে। গতকাল সিডনি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে কথা হয় দর্শকদের পরিচিত মুখ শোয়েব আলীর সঙ্গে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই বাংলাদেশের খেলা হোক না কেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোশ পরে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন শোয়েব আলী। জানালেন, খেলায় হারজিত যেটাই হোক, বাংলাদেশের সঙ্গেই আছি।
বিসিবির পরিচালকরা সিডনিতে
বাংলাদেশের খেলা দেখতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বিসিবির কয়েক জন পরিচালক মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে সিডনিতে এসেছেন। বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, টাইগারদের উত্সাহ দিতে সিডনি নেমেই তারা ছুটে গেছেন টিম হোটেলে। কথা বলেছেন সাকিব, লিটনদের সঙ্গে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বাদবাকি ম্যাচগুলোতেও তারা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করবেন।