সুধীর বরণ মাঝি
শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর-চাঁদপুর।
পণ্যমূল্য এপ্রিলে ১২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছিল ছিল, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য
সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বমূল্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কষ্টের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অযৌক্তিকভাবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই যখন দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয় এবং তা সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হয়, তখন বিষয়টির অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলে বোধ করি।
সিন্ডিকেটর ভয়াল থাবায় আজ জনজীবন বিপর্যস্ত। সিন্ডিকটেদের দৌরাত্বে দৈনন্দিন জীবনের অনেক
প্রয়োজন কাটছাট করেও জীবন চালাতে হিমশিমস খেতে হচ্ছে। জীবনের বোজা আজ বড্ড ভারী হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ জীবনের মৌলকত্ব ভুলে গেছে। মানুষ আজ অসহায় হয়ে পড়েছে, জীম্মি হয়ে পড়েছে দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান সিন্ডিকেটের হাতে। তেল থেকে বেল, ওষুধ থেকে বিষ, ডাল থেকে চাল, ধান থেকে পাট, আলু থেকে জিরা, পিঁয়াজ থেকে আদা, ডিম থেকে আটা, খাতা থেকে বই, কলম থেকে বেতন, ইট-পাথর-রড-বালু- কোনো কিছুই বাদ নেই। যেখানেই সিন্ডিকেটের হাত পড়েছে সেখানেই ছড়িয়েছে আগুন। সেই আগুনের তাপেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মানুষের দেহ-মন।
সহ্যের তো একটা সীমা থাকে, আর কত? যেই ইলিশ মাছের কোনো উৎপাদন খরচ নেই সেই ইলিশের দাম যদি হাজার পেরিয়ে যায়, তাহলে আর থাকলটা কী!
লোডশেডিংকে পুঁজি করে ১৫০০ টাকার চার্জার ফ্যানও সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন আবার ডেঙ্গুকে কেন্দ্র করে ১০০টাকার স্যালাইন ৫০০টাকা থেকে ১০০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ নেই কিংবা উৎপাদন খরচ একেবারেই কম সেসবের দাম কীভাবে আকাশছোঁয়া হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
সিন্ডকেটের কবলে বন্দি ৩০লক্ষ শহীদেরে জীবনের বিনিমিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশের সর্বত্র সিন্ডকেটদের দৌরাত্ব। সিন্ডিকেটের কাছে সরকার, রাষ্ট্র যেন অসহায়। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে মিলছে না ডিম, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছে সিন্ডিকেট, কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা । যেন দেখার কেউ নেই। আমরা সাধারণ জনগণ যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। আর সেই সাথে পালে হাওয়া তুলেছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী, টাকা পাচারকারী ঋণখেলাপীরা। একদিকে সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ব আর অন্য দিকে শাসকদের হরিরলুট এবং বিদেশে টাকা পাচারের হিরিক।
ধান থেকে চাল , চাল থেকে চামড়া, চামড়া থেকে পিঁয়াজ,পিঁয়াজ থেকে চাল এবং মৌসুমী সবজিসহ সবখানেই সিন্ডকেটদের কারসাজি। এই সিন্ডিকেট আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনগুলোকে দিনের পর দিন প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে। দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক ধরনের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে এবং গুজব রটানোর মধ্য দিয়ে চোখের সামনে দিনের আলোতে পকেট কেটে নিয়ে যায় আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা। আমরা অসহায়ের মত চেয়ে রই। কিছুই বলতে পারি না।
প্রয়োজনের সামনে জিম্মি করে হাত পা বেঁধে কুটকৌশলে আমাদের সর্বস লুটে নিচ্ছে ডাকাত সিন্ডিকেটের দল ।
সিন্ডিকেটের প্রভাবে বেড়েছে পারিবারিক কলহ, ভাঙ্গন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আত্মহত্যা। আমাদের উন্নয়ন,
গণতান্ত্রিক পরিবেশ, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, আমাদেরর অর্থনীতি এবং অর্জনগুলোকে গতিশীল রাখতে হলে সিন্ডিকেট ভাঙ্গার বিকল্প নেই। সিন্ডকেট ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। যে কোন উন্নয়নশীল দেশে প্রধান অন্তরায় হলো সে দেশের সিন্ডিকেট কারসাজি, ঘুষ, দুর্নীতি। এই কারসাজি একটি স্থিতিশীল সরকার এবং রাষ্ট্রকে যে কোন সময় বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে। এরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রয়ায় থেকে সুবিধা লুটে নেয়।
এই সিন্ডকেট কারবারীরা দেশ ও জাতির চরম শত্রু। সিন্ডিকেট কাবারের নেতিবাচক প্রভাব পরে পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে। এরা অক্টোপাসের মত চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে দেশের অর্থনীতিকে। এদের এক জায়গায় আঘাত করলে অন্যান্য ক্ষেত্রসমুহে সক্রিয় হয়ে উঠে। এরা গুজব রটায় সরকারের ভাবমুর্তিকে ধ্বংস করতে। এরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে , মানুষ খুন করে , ধর্ষণ করে , নির্যাতন করে , দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা অর্জন করে।
রাজধানীর রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে গ্রামের অটোচালক পর্যন্ত সিন্ডকেটদের কারসাজিতে আবদ্ধ। এরা অশান্ত করে রেখেছে জনজীবনকে। বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের অর্থনীতিকে। এদের কারকারসাজি রোধ করতে না পারলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের মুক্তি নেই। দিন দিন শ্রেণি বৈষম্য প্রকোট হচ্ছে, বাড়ছে হতাশা, নৈরাজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, আয় বৈষম্য। আর তাই এক শ্রেণির মানুষ দিন দিন আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হচ্ছে। রাতের আঁধারে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের সচল গতিশীল অর্থনীতি । সিন্ডকেট জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে,পারিবারিক ও সামাজিক সংকট তৈরি করে। এর ফলে পাবিবারিক কহল, ভাঙ্গন এবং দন্ধ-সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন সভ্য দেশে এই সিন্ডিকেট থাকতে পারে না। যেই সিন্ডকেটের কারসাজির কারণে এই দর্ভোগ এবং সংকট, গুটিকতক সিন্ডকেট কালোবাজারীর হাতে সমগ্র জনগণের দীর্ঘশ্বাস কোন সভ্য মানুষ তা মেনে নিতে পারে না। গোটা দেশ, দেশের আঠারো কোটি মানুষ জিম্মী হয়ে পড়েছে এই সিন্ডকেট কারসাজিদের কাছে।
দারিদ্র বৈষম্য দূরীকরণ এবং জাতীয় অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সিন্ডিকেটদের কারসাজি রোধ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমাদের সামনে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সংকট জনজীবনে চলছে তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ব। এরা নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। এরা চাল নিয়ে চালবাজি করে, পিঁযাজ নিয়ে পারসেন্টিস করে, ধান নিয়ে ধান্ধাবাজি, চামড়া নিয়ে তেলেসমতি,
পরিবহণ নিয়ে ভোগান্তীবাজী করে পুরো দেশটাকে জিম্মিী করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এদের কাছে যেন আমরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছি। যে কোন মূল্যে এই সিন্ডিকেটদের ভাঙ্গতে হবে। রক্তের দামে কেনা এই দেশে সিন্ডিকেটদের কোন স্থান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত সমাজ রাষ্ট্র গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হলো এদেশে সিন্ডিকেট কারসাজি।
দেশের প্রতিটি সংকট এবং ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেট কুশিলবদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন এবং সহযোগিতা। জাতীয় উন্নয়ন স্বার্থে সিন্ডিকেট কুশিলবদের মুখোশ উন্মোচ করে এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এদেরকে জাতীয় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীরা একটার পর একটা সিন্যিকেট করে আর আমরা সুশীল সমাজ, মিডিয়া এগুলো নিয়ে টকশো করি, কেউ কউে ফান ভিডিও করি। ওরা আমাদের ব্যস্ত রাখে ওদের এই অপকর্ম নিয়ে আলোচনায় আর সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীরা
ব্যস্ত আমাদের পকেট কাটা নিয়ে। আমরা রাজপথের প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, দিন দিন আমাদের মেরুদন্ড কুঁজো হয়ে যাচ্ছে আর সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীরা এর সর্বোচ্চ মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
রাষ্ট্র এবং সরকারের দুরদৃষ্টি না থাকলে সিন্ডিকেট কুশিলবরা যে কোন সময় সরকার এবং রাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে। সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ব রোধ করতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত , স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিন্ডিকেটদের সক্রিয়তা একটি দেশের জন্য অশনীসংকেতও বটে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলণ গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রকে তার আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কোন ভাবেই যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে আসতে না পারে।
আইনজীবীদেরকে এই বিষয়ে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পোশন করতে হবে। শুধু টাকার জন্য নয় দেশ ও বৃহৎ জনগণের প্রয়োজনে তাদেরকে সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা এবং রাজনৈতিক দূরবৃত্তায়ন দূর করা ও রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে সিন্ডেকেট কুশিলব কালোবাজারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়েই আজকের উন্নয়নশীল বাংলাদেশ আগামীর উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের দেশ হবে সিন্ডেকেট কুশিলব
কালোবাজারীমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যেখানে থাকবেনা দুশ্চিন্তা দুঃশাসন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জীবন আজ প্রায় অতিষ্ঠ, দিশাহারা। সংসারজীবন ও পারিবারিক জীবনে তৈরি হয়েছে নানা সংকট। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য অনেকেই জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আবার অনেকে ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের প্রতিদিনের এই ঊর্ধ্বগতিতে মনে হচ্ছে আমরা যুদ্ধের বাজারে আছি। যুদ্ধের বাজারেও দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতি হয় না। যতটুকু জানা গেছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়নি। বর্তমানে খোলাবাজারে প্রতিকেজি মোটা চালের মূল্য ৫০ ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। দফায় দফায় বাড়ছে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এসবের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। দ্রব্যমূল্যের আর কতটা ঊর্ধ্বগতি হলে সরকার এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে জিরো টলারেন্স নীতিতে?
দ্রব্যমূল্যের এই অসহনীয় অবস্থায় একটি গল্প মনে পড়ে গেল। এক দেশে এক সরকার ছিল। ওই সরকার ধনী, মালিক শ্রেণি ও ব্যবসায়ীদের জন্য যা কিছু ভালো- সেটিই করতেন। জনগণের আশা-আকাংক্ষার কোনো তোয়াক্কা করতেন না। জনগণ সরকারের এই অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে এবং ওই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরবর্তী নির্বাচনে তাদের পছন্দের নেতাকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসান। দেশ এবার ভালোভাবেই চলছে। জনগণও বেশ খুশি। এখন ওই দেশের ব্যবসায়ী, মহাজন, সুদিকারবারি ও মুনাফাকারী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে যায়। আগের মতো মুনাফা করতে পারছে না। তাই তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করে এবং সব ব্যবসায়ী মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। নতুন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন সরকারের সঙ্গে দেখা করে। তারা সরকারকে নানা প্রলোভন দেখা এবং প্রস্তাব দেয়- আপনি আমাদের সঙ্গে থাকলে আমরা আপনার সরকারকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেব। সরকার তাদের সরাসরি না বলে জানিয়ে দিল- আমরা ভেবে দেখি, আপনারা আরেকদিন আসুন।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেদিন সরকারের সঙ্গে দেখা করল, এর কয়েকদিন পর তারা চালসহ সব খাদ্যদ্রব্য কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়িয়ে দিল। জনগণ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তারা সরকারের সঙ্গে দেখা করল। সরকার তাদের আশ্বাস দিয়ে বলল- ঠিক আছে, বিষয়টি দেখছি। পরদিন তিনি ব্যবসায়ীদের ডাকলেন। ব্যবসায়ীরা বলল- ঠিক আছে, আমরা কেজিপ্রতি এক টাকা কমিয়ে দিই। সরকার বলল- না, আপনারা কেজিপ্রতি আরও সাত টাকা বাড়িয়ে দিন। সরকারের এই প্রস্তাব শুনে খুশিতে ব্যবসায়ীদের চোখ কপালে উঠে গেল। তারা মহাখুশি। তারা যেখানে কমানোর প্রস্তাব করল, সরকার সেখানে তাদের আরও সাত টাকা বাড়িয়ে দিল। পরদিন চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কেজিপ্রতি সাত টাকা বেড়ে গেল। এবার জনগণ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গেল এবং সরকারের সঙ্গে দেখা করল। দেখা করে সরকারের আশ্বাস নিয়ে ফিরে এল।
পরদিন সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে ডেকে বলল দ্রব্যমূল্য কেজিপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে দিতে। ব্যবসায়ীরা সরকারের কথামতো দুই টাকা কমিয়ে দিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করে দিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এখন নিয়ন্ত্রণে। জনগণও খুশি হল। কেজিপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে দিয়েছে।
আমরা দ্রব্যমূল্যের এ রকম নিয়ন্ত্রণ চাই না। এভাবে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি আর নিয়ন্ত্রণ খেলা আমরা চাই না। আমরা চাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার। ২০ টাকা বৃদ্ধি করে তিন টাকা কমানো- এটি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে না। এভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি সঠিক পথে চলতে এবং দেশের অর্থনীতিও মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারে না, বরং এটি জনগণকে শোষণের একটি কৌশল মাত্র।
সরকার যদি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়, তা হলে আগামী নির্বাচনে জনগণ এই সরকার থেকে মুখ
ফিরিয়ে নেবে। মাননীয় সরকার মহোদয় সিন্ডিকেটর আতঙ্ক, দৌরাত্ব নির্যাতন, অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের বাঁচান, আমরা আর পারছি না। আমরা চাই, সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কঠোরহস্তে দমন করবে। সরকার না চাইলে কোনো কিছুই রাষ্ট্রে টিকে থাকতে পারে না। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে সিন্ডিকেটের চালবাজির কাছে সরকারের সব অর্জন ভূলণ্ঠিত- তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা চাই, সরকার আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা চাই, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ সোনার বাংলায় গড়ে উঠবে।