ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ভয়াবহ বন্যায় শনিবার আরো অন্তত আটজনের মৃত্যুর পর মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৬২তে গিয়ে পৌঁছেছে। পাশের রাজ্য মেঘালয়েও মৃত্যু হয়েছে ১৮জনের। সেখানেও বন্যা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি।
শনিবার আসামের করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলাতে বন্যাজনিত ভূমিধসে চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও বন্যায় ভেসে গিয়ে রাজ্যে আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৌসুমী বৃষ্টি আসামে আছড়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত মোট ৫৩ জন বন্যায় ও নয়জন ভূমিধসে মারা গেছেন। ফলে রাজ্যে বন্যাজনিত কারণে এ মাসেই মৃত্যুর সংখ্যা ৬২তে গিয়ে ঠেকেছে, যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আসামের ৩২টি জেলার ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ এই মুহূর্তে বন্যাকবলিত। রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, আসামের বিভিন্ন প্রান্তে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ এখন ৫০০টির বেশি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র ও তার শাখানদীগুলোর পানি আসামের বহু জায়গাতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আসামের বাজালি জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মোট ১৭৩টি গ্রাম বন্যায় সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে গেছে। নলবাড়ি জেলাতেও প্রায় সোয়া লাখ মানুষ বন্যাদুর্গত হয়ে পড়েছেন।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা শনিবার কামরূপ (গ্রামীণ) জেলার রঙ্গিয়া শহর পরিদর্শন করেন।
এ সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, বন্যাকবলিত সব এলাকা থেকে দুর্গত মানুষজনকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যাত্রাণে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও নামানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে অবশ্য জাতীয় ও রাজ্য স্তরের ‘ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের’ কর্মীরাই ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের তদারকি করছেন।
শনিবার সকালে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, শুক্রবার থেকে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় আর একটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরাতেও অন্তত দশ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
মেঘালয়েও গত ৪৮ ঘণ্টায় অতিবৃষ্টি, বন্যা আর ভূমিধসে জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই রাজ্যে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
শুক্রবার মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিলস এলাকার চেরাপুঞ্জিতে এক দিনেই ৯০৮ দশমিক চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ১৯৯৮ সালের পর চেরাপুঞ্জিতে কখনো এত বৃষ্টি হয়নি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম এমনিতেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এবার চলতি জুন মাসেই অন্তত ৯ বার চেরাপুঞ্জিতে দৈনিক ৮০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ রেকর্ড রাখতে শুরু করার পর যা আর কখনো ঘটেনি।
উজানে এই নজিরবিহীন অতিবৃষ্টি আর ব্রহ্মপুত্র, বরাকসহ বিভিন্ন নদীর বিপুল জলস্ফীতিই ভাঁটির দেশ বাংলাদেশে বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে।