আগুনে নিহত ৪১, এখনো ধোঁয়া উড়ছে বিএম কন্টেইনার ডিপোয়
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোর আগুনে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল রবিবার জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে এই সংখ্যা ৪৯ জন বলে জানানো হয়েছিল। এরপর মৃতের সংখ্যা ৪৬ বলে জানানো হয়।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, ”কিছু মরদেহ একাধিকবার গণনা করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মর্গে একবার, আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেগুলো গণনা করা হয়েছে। এখন আমরা সব মৃতদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনেছি। তাতে সব মিলিয়ে ৪১জন মারা গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”
ফেনী বা কুমিল্লায় কোন মরদেহ নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
শনিবার রাতের ওই ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আগুন আয়ত্তে, তবে এখনো ধোঁয়া উড়ছে
দমকল বিভাগ বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন আয়ত্তে আনলেও সোমবার দুপুরেও কোন কোন অংশ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। দমকল কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আগুন নেভানোর শেষ পর্যায়ে রয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে দমকল সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”গতকাল রাতেই আগুন আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন আর আগুন নেই, তবে নানারকম জিনিসপত্র পোড়ার কারণে ধোঁয়া থাকতে পারে। আমরা এখন সেটা নেভানোর কাজ করছি।”
তিনি জানান, ধোঁয়া বন্ধ করার ডিপোর মধ্যে তল্লাশি শুরু করবে দমকল বিভাগ। তখন সেখানে আর কোন মরদেহ আছে কিনা, ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে হয়েছে বা আগুন কীভাবে লেগেছে, ইত্যাদি বিষয় জানা যাবে।
ডিপো এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিএনএ পরীক্ষা শুরু
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।
ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও আগের দিন এই সংখ্যা ৪৯ জন বলে জানানো হয়েছিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জনের মৃতদেহ রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতাল মর্গে যেসব মরদেহ রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় বের করা হবে। এজন্য হাসপাতালে একটি বুথ স্থাপন করেছে সিআইডি।
মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় বের করার জন্য দুপুর পর্যন্ত ২৩ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে।
প্রতিটি পরিবারের দুইজনের কাছ থেকে নমুনা হিসাবে রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে একমাস সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
”আগুনের ঘটনায় কেউ যদি নিখোঁজ থেকে থাকেন, তাদের স্বজনরা আমাদের এখানে এসে নমুনা দিতে পারবেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষায় সেটা ব্যবহার করা হবে,” তিনি বলছেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়ায় নিহতদের অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এ কারণে স্বজনদের সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সেখান থেকে বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন জানাচ্ছেন, হাসপাতালে সামনে আহতদের আত্মীয়স্বজন যেমন আছে, তেমনি অনেকে তাদের স্বজনদের খুঁজতে ভিড় করেছে। তারা স্বজনদের ছবি হাতে নিয়ে হাসপাতালে ঘুরছেন।
ঢাকা থেকে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল অগ্নিদগ্ধ আহতের ঘুরে দেখেছেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আহতদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তারা মনে করছেন।