সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেনের উদ্যোগে সুখের নাগাল পেল ৪৫ দম্পতি। বুধবার দুপুরে এক রায়ে তিনি এসব দম্পতিকে ফিরিয়েছেন নিজ সংসারে।
যৌতুক ও নির্যাতনসহ ছোটখাটো পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন ওই নারীরা। পরে তাঁদের অনেকেই স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবাসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে আদালতের বিচারক দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের ‘ভাঙা’ সংসার জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেন।
অভিযোগ আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় মামলার রায়ে আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক। রায়ের পর আদালতের কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এসব দম্পতিকে। এর পরে দম্পতিরা একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান।
সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে।
সম্মানিত বিচারক এর আগেও একইভাবে বেশ কিছু মামলার রায় দিয়েছেন। অনেক সংসার ভাঙন থেকে রক্ষা করেছেন। এসব উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এর আগে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৪টি এবং চলতি বছরের ১৫ মার্চ আরও ৫০টি মামলা আপসে নিষ্পত্তির মাধ্যমে মোট ১০৪ দম্পতির সংসার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন।
আদালতে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায়। তিনি বলেন, মামলার নিষ্পত্তির শর্তে বলা আছে: স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা, স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া; মনোমালিন্য, বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা, স্ত্রীকে নির্যাতন না করা, যৌতুক না চাওয়া।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, যৌতুকসহ পারিবারিক নানা ঝামেলায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন সময় ৪৫ নারী তাঁদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ৪৫ দম্পতিকে তাঁদের পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন।
আদালত প্রাঙ্গণে কথা হয় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার রাজনপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্তার মিয়া ও নাজিবা বেগমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, তাঁদের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর আগে। দুই বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। নাজিবা আক্তার বলেন, আক্তার ব্যবসা করার কথা বলে প্রায়ই তাঁর বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলতেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁকে মারধরও করতেন। অতিষ্ঠ হয়ে তিনি আদালতে মামলা করেছিলেন। এখন মিটমাট হয়েছে। তিনি (আক্তার) আর এসব করবেন না বলেছেন। তাই এখান থেকেই স্বামীর বাড়ি যাবেন।
আর আক্তার মিয়া বলেন, ‘এত দিন যা করছি, সেটা ঠিক করিনি। আজ থেকে আর কোনো ঝগড়া করব না। মিলেমিশে থাকব। আদালতের রায়ে আমরা খুশি।’