বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সে প্রস্তুতি পুলিশের রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ শত বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এ বাহিনীর রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ পুলিশের জনবল, লজিস্টিকস ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বেড়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ রয়েছে। নির্বাচনকালে পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করে থাকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ পুলিশকে যে দায়িত্ব দেবে পুলিশ সে দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজশাহী পুলিশ লাইনসের ড্রিল শেডে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি)
৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
আরএমপি কমিশনার মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) মীর রেজাউল আলম, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, কমিউনিটি পুলিশিং রাজশাহী মহানগর শাখার আহবায়ক ড. মো. আব্দুল খালেক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল।
অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছিল পুলিশ। দেশের শান্তিরক্ষা ও দেশ বিরোধী যে কোনো চক্রান্ত রুখে দিতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা কখনো কুণ্ঠাবোধ করে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশের দায়িত্বের পরিধি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ইত্যাদি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করেছেন। এ ধরনের বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের ফলে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এক সময় দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের হলি খেলা চলছিল। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিল সন্ত্রাসের জনপদ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে আমরা সবাই মিলে একযোগে একসঙ্গে কাজ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। ফলে দেশে এখন স্বস্তিদায়ক স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। এসডিসির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯) মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা ৯৯৯-এর মাধ্যমে জনগণকে দ্রুত সেবা দিতে পারছি। দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে। থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ডেস্ক স্থাপন করে সেবা দেওয়া হচ্ছে। মামলা তদন্তে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এখন ৯৫ ভাগ মামলার রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী ‘স্মার্ট পুলিশ’ গঠনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
রাজশাহীর নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আপনারা আরএমপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমাদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন, আমাদেরকে উজ্জীবিত করেছেন, যা ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ করার জন্য পুলিশকে উদ্দীপ্ত করবে। আপনারা অতীতে পুলিশকে যেভাবে সহায়তা দিয়েছেন ভবিষ্যতেও আপনাদের এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
আইজিপি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘নবচেতনায় আরএমপি’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে উইটনেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং ভিআর ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে একটি কেক কাটা হয়।
এর আগে আইজিপি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আরএমপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয় । র্যালিটি নগরীর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, চারটি থানা নিয়ে ১৯৯২ সালের ১ জুলাই আরএমপি গঠিত হয়। বর্তমানে ৪৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের আরএমপির থানার সংখ্যা ১২টি। পরে আইজিপি রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে রাজশাহীস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অফিসারদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।