পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ার বাজার। গতকাল সোমবারও শেয়ার বাজারে মূল্য সূচকের বড় পতনে লেনদেন হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমল। সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনও কমছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। নতুন করে কেউ শেয়ার কিনছে না। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদের জন্য ফ্লোরপ্রাইস দেওয়া ঠিক হয়নি। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিলে ভালো হতো। এদিকে বাজারের এ মন্দা অবস্থায় বিপাকে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। তাদের হতাশার পাল্লা দিনদিন ভারী হচ্ছে।
ডিএসইর তথ্য বলছে, গতকাল ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্য দিবসের চেয়ে ১১.৯২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪৫.৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ৪.৯২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৮.৩০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৩.৭৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৬.১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এই বাজারে ৪০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন ৪১৯ কোটি ৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। তার আগের কার্যদিবসে ৪৬৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। সূচকের পাশাপাশি টানা তিন কার্যদিবস লেনদেনও কমেছে। গতকাল ডিএসইতে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরও কমেছে। লেনদেনকৃত মোট ৩০৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে ১০৫টির দরই কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৪২টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৯টি কোম্পানির শেয়ার দর।
বাজারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি ও গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও গতকাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। কেউ নতুন করে শেয়ার কিনছে না। তিনি বলেন, এটা তো প্রকৃত স্টক মার্কেট না। এখন তো বাজারে ভালো শেয়ার ট্রেড হচ্ছে না। সব জাংক শেয়ার ট্রেড হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। একটা সময় বাজারের প্রয়োজনে ফ্লোরপ্রাইস দেওয়া হয়েছিল। ঠিক আছে। কিন্তু দীর্ঘসময়ের জন্য ফ্লোরপ্রাইস দেওয়া ঠিক হয়নি।
এ প্রসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তিনি বলেন, বাজার ভালো হলে তারল্যসংকট কোনো সমস্যা নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএমবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাজারের এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। একই কথা বলেছেন বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ তিনি বলেন, বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা কাজ করছে। এ কারণে নতুন বিনিয়োগও আসছে না। তিনি বলেন, ফ্লোরপ্রাইস না থাকলে বাজারে লেনদেন বাড়ত। ফ্লোরপ্রাইসের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক বিনিয়োগকারী জানান, বাজারের দীর্ঘ মন্দা অবস্থায় দিনদিন হতাশা বাড়ছে। ফ্লোরপ্রাইসের কারণে আটকে থাকায় প্রয়োজনের সময়ও তিনি তার শেয়ার কেনাবেচা করতে পারছেন না।
গতকাল ডিএসইর পাশাপাশি অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ২৯ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৫২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া, সিএসসিএক্স ১৭ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭৭ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের দিন ৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। গতকাল সিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ১৫৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ২৪টির, কমেছে ৬৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭২টির দর।