রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় সেনাদের আর্থিক সহায়তা দিতে নিজেদের নগ্ন ছবি বিক্রি করছেন দেশটির একদল নারী। এই পর্যন্ত তারা ছবি বিক্রি করে ৫ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড উঠিয়েছেন।
অর্থ উঠানোর জন্য ওই নারীরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন যারা নাম দেওয়া হয়েছে ‘টারঅনলিফ্যানস’। এই পরিকল্পনার মূল কারিগর হলেন ২৩ বছর বয়সী নাস্তাসিয়া নাস্কো নামের এক তরুণী। খবর ল্যাড বাইবেল এবং বিজনেস ইনসাইডারের।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশের কয়েকদিন পরই অনেকটা দুর্ঘটনাবশত ইউক্রেনীয় সেনাদের সাহায্য করতে নগ্ন ছবি বিক্রি করে অর্থ উঠানোর বুদ্ধি মাথায় আসে নাস্কোর। আর এই জন্য তিনি জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারকে ব্যবহার করেন। প্রথমে তিনি যুদ্ধের কারণে খারকিভে আটকে পড়া এক পরিচিত ব্যক্তিকে সরিয়ে আনতে সাহায্যের চেষ্টা করেন এবং অনেকটা মজা নিয়েই টুইটারে লিখেন, যিনি এই ব্যাপারে সাহায্য করবেন তাকে তিনি নগ্ন ছবি পাঠাবেন।
ওই টুইটটি পোস্ট করার মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি দেখেন তার ইনবক্সে ১০টি ম্যাসেজ আসে।এতে তিনি বেশ অভিভূত হন। পরে আটকে পড়া তার পরিচিত ওই ব্যক্তিকে এক লোক নিরাপদে খারকিভ থেকে সরিয়ে আনেন। এরপর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাহায্য করায় ওই ব্যক্তিকে একটি নগ্ন ছবি পাঠান তিনি।এই ঘটনার পরই তিনি তার বন্ধু আনাস্তাসিয়া কুচমেনকোকে নিয়ে ‘টারঅনলিফ্যানস/TerOnlyFans’গ্রুপটি খুলেন। টেরিটোরিয়াল ডিফেন্সের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে নামের শুরুতে টার/Ter ব্যবহার করছেন তারা।
তিনি এই উদ্যোগটি গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে লঞ্চ করেন। নাম এবং ধারণার সঙ্গে মিল থাকা সত্ত্বেও ‘অনলিফ্যানস’-এর সঙ্গে টারঅনলিফ্যানসের কোনো যোগসূত্র নেই। আর এই দুই গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য হলো অনলিফ্যানস গ্রুপের কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোনো রিকোয়েস্ট করেন না।
নাস্কো বলেন, আমরা যৌন কর্মী নয়। আমরা যুদ্ধের জন্য অর্থ উঠানোর চেষ্টা করছি।
নাস্কো বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, উদ্যোগে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নারীই ইউক্রেনের এবং কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন।
যদিও উদ্যোগটিতে মোট ৩৮ জন অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৩৫ জন নারী এবং তিন জন পুরুষ। এদের প্রাপ্ত টাকা সরাসরি ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল প্রতিরক্ষায় চলে যায়। তবে কিছু অর্থ পশু আশ্রয়কেন্দ্র এবং শরণার্থীদেরও দেওয়া হচ্ছে।
নাস্কো জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান পাঠানো হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ অনুদান পাওয়া যাচ্ছে ইউক্রেন থেকেই।
এদিকে নাস্কোর বন্ধু কুচমেনকো এখনো ইউক্রেনে বসবাস করছেন। রুশ আক্রমণের আগে নাস্কো কিয়েভে বসবাস করতেন। কিন্তু রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে তিনি পোল্যান্ডের ওয়ারশতে চলে যান। যদিও তিনি বেলারুশের নাগরিক।
নাস্কো বলেন, আমি খুব খুশি, কারণ আমি ইউক্রেনের মানুষকে সাহায্য করতে পারছি এবং এটা প্রমাণ করেছি যে সব বেলারুশিয়ানই রাশিয়ানদের মতো না। আমরা ভালো মানুষ। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে চাই। খুব শিগগিরই এই উদ্যোগের সমাপ্তি টানার কোনো পরিকল্পনা নাস্কো বা তার বন্ধুর নেই। নাস্কো বলেন, যখন পুতিন মারা যাবেন এবং রাশিয়া তাদের আগ্রাসন বন্ধ করবে তখন আমরা এই উদ্যোগের সমাপ্তি টানবো।