বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণরা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তরুণদের হাত ধরে বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তরুণ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে তরুণরাই যেন আশার প্রদীপ। তরুণদের সৃজনশীলতার চর্চার মাধ্যমে দক্ষ ও সুনাগরিকে পরিণত হচ্ছে।
সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে তরুণরা বেশ ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। তরুণ প্রজন্ম ও সমাজ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। সমাজকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম হচ্ছে। প্রতিটি সামাজিক সংগঠন দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা, এসব সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একজন নাগরিকের মাঝে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে এসব সংগঠন দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য সহশিক্ষা হিসেবে কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন সংকটে সামাজিক সংগঠন ব্যাপক তাৎপর্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমানে সমাজে রয়েছে অসংখ্য নামে-বেনামে সামাজিক সংগঠন। প্রতিটি সংগঠনের থাকে বেশকিছু নীতিমালা কিংবা লক্ষ্য উদ্দেশ্য। এসব শর্ত যতটা পূরণ করা হচ্ছে তার বেশির ভাগই যেন কল্পনার সাগরে। বিশেষ করে, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। অমুক তমুক সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা সদস্য। দায়িত্ব পাওয়ার পর সবাই একাধারে ‘অভিনন্দন’ ও ‘শুভকামনা’—এমন মন্তব্যের সাগরে ভাসিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় অধিকাংশই সংগঠনের প্রতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। নৈতিকতা, মানবিকতা ও সেবার দোহাই দিয়ে পরবর্তীকালে যেন তা অলীক কল্পনায় পরিণত হয়। এভাবেই সমাজে বিভিন্ন সংগঠনের প্রচার অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, সামাজিক সংগঠন এখন রাজনৈতিক সংগঠনে আবর্তিত হচ্ছে। নামে সামাজিক সংগঠন হলেও প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিগণ এসব সংগঠনে যুক্ত হচ্ছেন। সমাজ সেবাকে উপেক্ষা করে আত্মসেবাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনগুলোর সিংহভাগই হচ্ছে কাগজে কলমে। কোনোভাবেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না।
সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সবাই কামনা করে কিন্তু প্রকৃত কল্যাণ তখনই সম্ভব, যখন সেখানে সেবাই হবে মুখ্য উদ্দেশ্য। সমাজের উন্নতির জন্য শ্রম, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। সামাজিক সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রতিটি সংগঠকদের ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। দায়িত্বশীল ও দক্ষ নাগরিক হতে হবে। সমাজে আজও সেই বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, কিশোর অপরাধ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বৈষম্য, অশিক্ষিত লোকদের প্রাধান্য যেন বেড়েই চলছে। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। তরুণদের হাত ধরে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমাজ কল্যাণে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ, সমাজে অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ মানববন্ধন, আন্দোলন, সভা-সেমিনারের আয়োজন করা ইত্যাদি। সমাজে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখা। পাঠাগার স্থাপন, তরুণদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া, দেশের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে সমাজের গরিব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা যায়। এভাবে একটি সুন্দর ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।
এটা সত্য যে, তরুণদের দায়িত্বশীল সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন আঙ্গিকে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান অসংগতি দূর করা সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যায়, অবিচার দূর হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঘিরে আবর্তিত এসব সংগঠন না থাকলে হয়তো সমাজ কখনো প্রদীপের আলোয় চকচক করত না।
বস্তুত, এসব সামাজিক সংগঠন দেশের তরুণ প্রজন্মের সুদক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে যাক। সমাজের জরাজীর্ণকে উপড়ে ফেলে নতুনত্ব সৃষ্টি করতে হবে। তারুণ্যের শক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসুক প্রতিটি দেশে। সামাজিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক যুগ যুগ ধরে। দেশের উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিটি সামাজিক সংগঠন ব্যাপক অবদান রাখুক। তারুণ্যের কর্মে, ধর্মে, ভাবনায়, চিন্তা-চেতনায় আলোকিত হোক প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্র। পরিমার্জিত ও চৌকস নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা হোক। তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে এগিয়ে যাক দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র।