দুটি বড় উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় সৌদি আরবের বিপক্ষে মাঠে নামবে মেসির আর্জেন্টিনা। দুটি বড় উপলক্ষ্যর একটি, ইতালির বিশ্বরেকর্ড নিজেদের করে নেওয়া। দ্বিতীয়টি ৩৬ বছরে আরো একবার বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরা। আপাতদৃষ্টিতে সে লক্ষ্যের বহু দূরের। আর্জেন্টিনার মন তাই সৌদি আরব ম্যাচকে ঘিরে। যে ম্যাচ জিতলে ইতালির বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসাবে আলবিসেলেস্তেরা।
টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতারে পা রেখেছে আর্জেন্টিনা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে একটানা সবচেয়ে বেশি ৩৭ ম্যাচ না হারার রেকর্ডটি ইতালির। আজ সি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে না হারলেই আজ্জুরিদের ছুঁয়ে ফেলবে আর্জেন্টিনা। এরপর মেক্সিকোর বিপক্ষে অপরাজিত থাকলেই ইতিহাসের পাতায় নাম তুলবেন মেসির দল। গড়বে বিশ্বরেকর্ড।
বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে আজ সৌদি আরবের বিপক্ষে বড় জয়ই প্রত্যাশা আর্জেন্টিনার। তবে ম্যাচটি মোটেও সহজ হবে না বলে জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সৌদি আরবকে বেশ ভালো করেই চিনি। তারা খুব ভালো দল, টেকনিক্যালি শক্তিশালী, গতিশীল ফুটবলারও আছে। তারা আমাদের জন্য কাজ কঠিন করে তুলবে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ বলেই লুসাইলে জয় তুলে নেওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্কালোনি, বিশ্বকাপে এটা হবে আমাদের প্রথম ম্যাচ। যা সব সময়ই কঠিন হয়। কিন্তু এটা বিশ্বকাপ, সবকিছুই এখানে কঠিন।’
তবে চাপে ভুগছে না আর্জেন্টিনা। খেলাটাকে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা এখন স্রেফ খেলা হিসেবেই নিচ্ছে। ফলে দলের ওপর বাড়তি কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন লিওনেল স্কালোনি, ‘আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই, কারণ দিনশেষে এটা স্রেফ ফুটবল। আমরা বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছি, আমরা সচেতন ফুটবল আর্জেন্টিনার জন্যই তো খেলব। কিন্তু ‘এটা স্রেফ একটা খেলা এবং যে কারণে আমাদের মাঠে সবকিছু প্রমাণ করতে হবে এবং নিজেদের কাজ করতে হবে।’ বিশ্বকাপ জয়ের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা ছাড়াও আর্জেন্টিনা আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে কোপা আমেরিকা জয়ের সুখস্মৃতিতে। গেল বছর ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছরের শিরোপা খর ঘোচায় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার এবারের চ্যালেঞ্জ, ৩৬ বছর পর বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় তোলার। সেজন্য দারুণ একটি দল গড়েছেন স্কালোনি। চোটের কারণে মিডফিল্ডের পরীক্ষিত সৈনিক জিওভানি লো সেলসো এবং আক্রমণভাগের দুই সদস্য নিকো গনজালেস ও হোয়াকিন কোরেয়াকে হারালেও, শক্তি খুব একটা কমেনি দলটির।
আজ সৌদি আরবের বিপক্ষে সেরা একাদশই খেলাতে চান স্কালোনি। গতকাল দোহায় ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার সবশেষ অনুশীলন শেষে বোঝা গেছে সেটাই। আক্রমণভাগে লিওনেল মেসি এবং আনহেল ডি মারিয়ার সঙ্গে থাকবেন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজ। মিডফিল্ডে রদ্রিগো ডি পল এবং লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গে লো সেলসোর ঘাটতি পূরণ করার দায়িত্ব পড়তে যাচ্ছে আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারের কাঁধে। রক্ষণ দায়িত্ব সামলাবেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, মার্কোস আকুইনা এবং নাহুয়েল মলিনা। তিন কাঠির নিচে দাঁড়াবেন অতন্দ্র প্রহরী এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ইন-ফর্ম এই একাদশের সামনে সৌদি আরব কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে দলটি আজ যে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বমঞ্চে খেলতে যাওয়া সৌদির বর্তমান দলটা অবশ্য আছে দারুণ ফর্মে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হার্ভ রেনার্ডের দল হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ। আর ১৮ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ১৩টিতে। রেনার্ডের অধীনে সৌদি আর্জেন্টিনাকে ভোগাতে সামর্থ্য রাখে। এই কোচের অধীনে জাম্বিয়া ২০১২ সালে জিতেছিল আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের শিরোপা। ২০১৫ সালে তার অধীনে আইভোরি কোস্টও দেখায় একই কৃতিত্ব।
এমন ইতিহাস খোদ রেনার্ডকেই দেখাচ্ছে বড় স্বপ্ন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বেশ কঠিন কয়েকটি ম্যাচ খেলতে হবে। কিন্তু একজন কোচ অথবা খেলোয়াড় হিসেবে আপনি স্বপ্ন দেখবেন বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার এবং নিজেদের সেরা দলের সামনে ফেলার। কেননা বিশ্বসেরা দলগুলো শিরোপা জেতার লক্ষ্যে এখানে আসে। আবার আপসেটের শিকারও হয়। যখন আপনি টুর্নামেন্টের অন্যতম ছোট দলগুলোর একটি হবেন, তখন এসব অবাক করে দেওয়া ফলের দিকেই চেয়ে থাকবেন।’