ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। এ ঘটনার জেরে কলকাতায় শনিবার (২২ অক্টোবর) বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার প্রতিবাদে বামপন্থী দলগুলোসহ কলকাতার নাগরিক সমাজের ব্যানারে সর্বস্তরের মানুষজন প্রতিবাদ মিছিল করেছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির শিক্ষক সংগঠনও কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।
কলকাতার নাগরিক সমাজের ব্যানারে মিছিলে ছিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, মন্দাক্রান্তা সেন, চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত। এছাড়া মিছিলে ছিলেন বামপন্থী নেতা বিমান বসু ও কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। সবাই প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন ২০১৪ ও ২০১৭ সালের চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরি দিচ্ছে না।
এর আগে, পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে গত ১৭ অক্টোবর দুপুর থেকে কয়েক হাজার উত্তীর্ণ প্রার্থী কলকাতার সল্টলেকের করুণাময়ীর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দপ্তরের কাছে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই আন্দোলন রাতেই অনশন আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। সেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাদের নিয়োগ দেওয়া না পর্যন্ত অনশন আন্দোলন চলবে।
তবে আন্দোলন বন্ধ করতে রাজ্য সরকার ১৭ অক্টোবরই রাতে আন্দোলনের জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরও আন্দোলন চলতে থাকলে কলকাতা হাইকোর্ট এক নির্দেশে জানিয়ে দেন, আন্দোলনকারীদের ১৪৪ ধারা মেনে চলতে হবে।
তবে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১০ মিনিটে অনশনকারীদের তুলে দেয় পুলিশ। এ সময় মারামারির ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বামপন্থী দল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতাকর্মীরা কলকাতার সল্টলেকের প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
কলকাতার পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে, বিজেপির নেতারাও শুক্রবার কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ধর্মতলায় প্রতিবাদ মিছিল করে কংগ্রেস। এরপর কলকাতায় শনিবার বড় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এক ঘোষণায় বুধবার (১৯ অক্টোবর) জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের দাবি মানতে পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তাদের সবাইকে আবার চাকরির জন্য নতুন করে ইন্টারভিউ দিতে হবে। বিনা ইন্টারভিউতে কাউকে নিয়োগ করা হবে না।
তবে বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্য সরকার নতুন করে ১১ হাজার ৭৬৫ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তারা তা মানবেন না। তাদের বক্তব্য, যারা ২০১৪ ও ২০১৭ সালের পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং দুইবার ইন্টারভিউতে অংশ নিয়ে পাশ করেছেন, তাদের অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে।
নতুন করে আবার ইন্টারভিউ দেবেন না তারা। সরকার যে নতুন করে ১১ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সেই বিজ্ঞপ্তি তারা মানবেন না। সাড়াও দেবেন না। জীবন চলে গেলেও অনশনে লড়ে যাবেন।
যদিও এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালে সচিবালয় নবান্নে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে উত্তীর্ণ ২০ হাজার চাকরি প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হবে।
এর মধ্যে, ২০১৭ সালের ১৬ হাজার ৫০০ এবং ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৫০০ উত্তীর্ণ প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু এ ঘোষণা কার্যকর হয়নি। বরং স্কুল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ না করে ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের চাকরি দিয়েছেন।