ঈদের আরো আট দিন বাকি থাকলেও ঢাকার হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক ও পিকআপে করে গবাদি পশু আনছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই গাবতলীর হাটে গরু আনা শুরু হয়েছে। খামারি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ভারতীয় গরু না এলে এবার পশুর দাম ভালো পাবেন তাঁরা।
বিজ্ঞাপন
স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটিতে ১৯ অস্থায়ী পশুর হাটের বেশির ভাগেরই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহজাহানপুর, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবের আশপাশের খালি জায়গা ও আফতাবনগর হাটে কোরবানির পশু দেখা গেছে। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাবের আশপাশের খালি জায়গায় পশুর হাটের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এই হাটে গরু-মহিষসহ বিক্রির জন্য বেশ কয়েক ধরনের পশু তোলা হয়েছে। ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে পশুর হাট, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবের আশপাশের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) অস্থায়ী পশুর হাটেরও প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
ইজারাদারদের আশা, দু-এক দিনের মধ্যে অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানির পশু আসবে।
গতকাল বিকেলে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরু, মহিষসহ কোরবানির বিভিন্ন পশু আনা হচ্ছে। ছোট-বড় গরু দেখতে হাটে আসছে অনেকে। মোহাম্মদপুর থেকে আসা আরফান মিয়া নামের এক মুদি দোকানি জানান, গরু দেখতে হাটে এসেছেন। কেনার সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে তিনি হাটে আসবেন। আলী মিয়া নামে কুষ্টিয়ার এক গরুর খামারি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক দিন আগে ১০টা গরু নিয়া আসলাম। নিজের পালা গরু প্রতিবছর বেচতে নিয়া আসি। আশা করতেছি ভালো লাভ হবে, যদি ভারতের গরু বেশি ঢুকতে না দেয়। এখন যারা হাটে আসতেছে, তারা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যান। শেষের দিকে যারা হাটে আসবে তারা গরু কিনে নেবে। ’ গতকাল পর্যন্ত গাবতলীর হাটে আসা ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকবে। বড় গরুও বিক্রি হবে, তবে কম। হাটে কোরবানির পশু দেখতে আসা আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো অনেক সময় আছে। দেখতে আসলাম কেমন গরু আসছে। শুনতেছি গরুর দাম এবার বেশি হবে। তাই দেখতে আসা। ’
দুই সিটির অস্থায়ী ১৯ পশুর হাটসহ মোট হাট ২১
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবার পশুর হাট কমিয়ে ২০টি করতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে এসে উত্তর সিটি করপোরেশন অস্থায়ী আরো একটি হাট বাড়িয়েছে। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গায় বসবে উত্তরের নবম অস্থায়ী হাট। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে তাদের অস্থায়ী ১০ হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে পারলেও উত্তর সিটির ৯ অস্থায়ী হাটের মধ্যে চূড়ান্ত ইজারাদার ঠিক হয়েছে ছয়টির। বাকি তিনটির ইজারার জন্য বেশ কয়েকবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও চূড়ান্ত করা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পশুর হাট ইজারা দিয়ে যদি অল্প কিছু টাকাও বেশি পাই সেটি ভালো। তাই একটু দেরি হচ্ছে। ’
এবার হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় ও ডিজিটাল লেনদেন চালুর বিষয় উল্লেখ করে মেয়র কালের কণ্ঠকে বলেন, “এবার ই-কমার্সের পরিবর্তে কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন চালু করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে ডিএনসিসির ছয়টি পশুর হাটে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ নামের পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এটি চালু করা হয়েছে। এর ফলে এসব হাটের ক্রেতা ও বিক্রেতাকে টাকা বহনের ঝামেলা পোহাতে হবে না। ধীরে ধীরে নগরবাসীর জন্য সব সুবিধা সহজে পেতে বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল করা হবে। ”
তিনি বলেন, ‘করোনা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ক্রেতাদের অনুরোধ করব, আপনারা বয়স্ক আর শিশুদের কোরবানির পশুর হাটে নেবেন না। ’
জানা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট নামের পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি পশুর হাটে এবার ডিজিটাল লেনদেন সুবিধা চালু করা হচ্ছে। বিক্রেতারা ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পশু বিক্রির টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। পশু বিক্রির টাকা গ্রহণ করতে তাঁদের হাতে থাকবে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র, যার মাধ্যমে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিক্রয়মূল্য পরিশোধ করতে পারবে ক্রেতারা।
দক্ষিণ সিটির ১১ পশুর হাটে মেডিক্যাল টিম
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় থাকা কোরবানির পশুর ১১টি হাটের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করে দিয়েছে ডিএসসিসি। ৩২ জনের এ টিমের সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির।
চট্টগ্রামে প্রথম দিনে কেনাবেচা কম
পশু বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম শহরে হাটগুলো প্রস্তুত হয়েছে আগেই। অস্থায়ী-স্থায়ী মিলিয়ে এবার ছয়টি হাট বসবে নগরজুড়ে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই প্রায় প্রস্তুত পশুর হাটের অবকাঠামো। তৈরি করা হয়েছে পশু রাখার সারি সারি টিনের প্যান্ডেল। তার মধ্যে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটিসহ খাজনার স্থান। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে আসতে শুর করেছে নানা জাতের পশু। সেগুলো তোলা হচ্ছে হাটে। কিন্তু প্রথম দিনে গতকাল সাগরিকা গরুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে বেচাকেনা নেই। বেশির ভাগ ক্রেতা শুধু দরদাম করেই হাট ছাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার শুরু হলেও এখনো পশুর হাট জমে ওঠেনি। বাজারে অনেক গরু ও ছাগল আসছে। প্রতিদিনই পশু আনছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ক্রেতা এলেও দাম দেখেই চলে যাচ্ছে তারা। লোকজন শুধু দেখছে আর দরদাম করছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে বিক্রি জমে উঠবে।